পবিত্র মাহে রমজান। কতই না উত্তম এ মাস! মুমিন মুসলামের হৃদয়ে যেন খুঁশির এক কল্লোল বয়ে যায়। এতটা মাহাত্ম অন্য কোন মাসের দেয়া হয় নাই। আজকে আমরা জানার চেষ্টা করবো পবিত্র মাহে রমজান এর গুরুত্ব এবং ফজিলত সম্পর্কে। কি তাৎপর্য রয়েছে এ মাসের তাই জানার চেষ্টা করবো।
আরবী মাসের নবম মাস কিন্তু পবিত্র মাহে রমজানের মাস। রোজাকে ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ বলা হয়।
মানুষের জীবন কিন্তু অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। এই সংক্ষিপ্ত জীবনে তার দায়িত্ব কিন্তু অনেক।
আগের দিনে মানুষ হাজার বছর পর্যন্ত বাঁচত। তখন মানুষ অনেক সময় পেত ইবাদাত বন্দেগি করার জন্য। কিন্তু বর্তমান সময়ে মানুষ গড়ে ৬৫ বছর বাঁচে।
এ অল্প সময়ে মহান আল্লাহকে রাজি-খুঁশি করে তার পবিত্র জান্নাতকে অর্জন করা কিন্তু সত্যিই অনেক কঠিন একটি বিষয়।
তবে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হল এ মাসের মধ্যেই এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আর সেই রাতটি হচ্ছে কদরের রাত।
মনে করুন আপনার জীবনে ১৫ টি কদরের রাত কবুল হয়েছে। এখন এই দশ রাতকে আপনি হাজার মাস দিয়ে গুন করুন।
যদিও বলা হয়েছে যে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। তাহলে ১৫ * ১০০০ = ১০,০০০ মাস যা ৮৪৪ বছর প্রায়!
মাত্র ৬০-৭০ বছরের জীবন বৃদ্ধি হচ্ছে ৯০০ বছরে প্রায়। এটি সত্যিই মহান সৃষ্টিকর্তার অপার এক করুণা। এবার চলুন জেনে নিই সিয়াম আসলে কি?
সিয়াম শব্দের অর্থ কি?
সিয়াম শব্দের অর্থ আসলে বিরত থাকা, পরিত্যাগ করা। মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য সুবহে সাদিক হতে সন্ধা পর্যন্ত সকল ধরণের পানাহার থেকে পরিপূর্ণ ভাবে বিরত থাকার নাম হচ্ছে সিয়াম।
এটি সওম শব্দের বহুবচন। রোজা ফারসি শব্দ হলেও এর আরবী হচ্ছে সিয়াম। এসময় সকল ধরণের বস্তুগত চাহিদা হতে মানুষ বিরত থাকে।
মহান আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
“রোজার আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব” । এর দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে আমরা যা কিছু করি আমদের নিজেদের জন্য।
কিন্তু পবিত্র রমজান মাসের রোজা তিনি আমাদের জন্য দিয়েছেন মানবতার মুক্তির একটি ঢাল স্বরূপ।
যেহেতু আল্লাহ নিজেই এর প্রতিদান দিবেন তাই আমাদের উচিত মহান আল্লাহর অশেষ রহমত সিয়ামের সঠিক লালন করা।
আমাদের হৃদয় এর দ্বারা কলুষমুক্ত করা। আমরা যেন মহান আল্লাহ তা’আলার সদয় দৃষ্টি থেকে কেউ বাদ না পড়ি।
কেননা আল্লাহর রহমত থেকে দূরে যাওয়ার অর্থ নির্ঘাত নিশ্ব হয়ে যাওয়া। রমজান মাসকে সাধারণত ৩টি ভাগে বিভক্ত করা হয়।
১. প্রথম ১০ দিন রহমতের
এ সময় মহান আল্লাহ তা’আলার রহমত বর্ষিত হতে থাকে। মহান আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে চাইলে তিনি তা কবুল করে নেন আর রহমতের মাত্রা বাড়িয়ে থাকেন।
রমজানে ১ টাকার দানকে ৭০ টাকায় পরিণত করার কথা বলা হয়েছে। এটা কেমন নিয়ামত আর রহমত একটু বোঝার চেষ্টা করুন।
২. দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের
এই দশ দিন মানুষ মহান রবের কাছে মাগফিরাতের জন্য প্রার্থণা করবে। নিজের দুর্বলতা স্বীকার করে মহান প্রভুর দরবারে মাথা নত করে পরকালীন মুক্তি চাইবে।
৩. তৃতীয় ১০ দিন নাজাতের
রমজানের শেষ দশ দিন মহান প্রভুর কাছ থেকে মুক্তি লাভের দিন। এ সময় নিজেকে মহান রবের নিকট সঁপে দিয়ে নাজাত তথা মুক্তির জন্য বিশেষভাবে প্রার্থণা করা হয়।
পবিত্র মাহে রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত
আমরা এখন জানবো রমজান মাসের গুরত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে। তো বন্ধুরা আপনারা যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারা কখনই রমজান মাস থেকে নিজেকে মাহরুম করবেন না।
-
সিয়াম ঢালস্বরূপ
নবী কারীম (সঃ) বলেন, বিভিন্ন কু-প্রবৃত্তির তাড়না থেকে বাঁচার জন্য এটি একটি ঢাল হিসেবে কাজ করে। এতে করে একজন মানুষ আগুন থেকে বেঁচে যায়।
-
সিয়াম সুপারিশকারী
কাল কিয়ামতের দিনে সিয়াম মহান আল্লাহকে বান্দার হয়ে বলবে, হে প্রভু আমি তোমার বান্দাকে সারাদিন বিভিন্ন প্রবৃত্তি থেকে দূরে রেখেছি, আর কুরআন বলবে, প্রভু আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি।
আপনি সুপারিশ গ্রহন করুন।
-
গুনাহের ক্ষমা আর কাফফারা হিসেবে সিয়াম
পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম গুনাহের ক্ষমার জন্য কাফফারা হিসেবে পরিগণিত হয়। মহান প্রভু হয়তো আপনাকে তার সন্তুষ্টি লাভের জন্য রাখা রোজার বিনিময়ে ক্ষমা করে দিবেন।
আমাদের নবী (সঃ) বলেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমান ও ইহ্তাসাবের সাথে পবিত্র রমজানের রোজা রাখেন মহান আল্লাহ্ তার পূর্বের সকল গুনা ক্ষমা করেন (সহীহ বুখারী)
-
সিয়াম পরকালীন মুক্তির মাধ্যম
যারা পূর্ণ ঈমানের সাথে পবিত্র রমজান মাসের রোজা রাখে তাদের জন্য ২টি মজার পুরস্কার আছে।
১. সারাদিন রোজা শেষে ইফতার মুহূর্তে এক অনাবিল আনন্দ। আর,
২. পরকালীন জিন্দিগিতে মহান রবের দিদার নসীব (সুবহানআল্লাহ্)। এর থেকে মজার আর সাফল্যের আর কি হতে পারে!
-
সিয়াম পালনকারী জান্নাতের মেহমান
পবিত্র রমজান মাসের রোজা রাখা মানুষদের জন্য অর্থাৎ সিয়াম পালনকারীর জন্য জান্নাতে একটি দরজা খোলা থাকবে।
তারা সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে হাসতে হাসতে প্রবেশ করবে। কতই না উত্তম সেই পথ।
পবিত্র রমজান মাসে যে কাজগুলো করা যাবে
মহান আল্লাহর অশেষ নিয়ামতের মাস পবিত্র রমজান মাস। এ মাসে আমাদের নিচের কাজগুলো বেশি বেশি করা উচিত।
- ফরজ শেষে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। কেননা এ মাসের নফল নামাজ অন্য সময়ের ফরজ নামাজের সমান।
- বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা।
- বেশি বেশি দান সদকা করা।
- মনের মধ্যে একমাত্র মহান আল্লাহর প্রতি মুহাব্বত, তার প্রতি ভয়, একমাত্র তারই আনুগত্য করা।
পবিত্র মাহে রমজান মাসে যে কাজগুলো করা যাবে না
পবিত্র রমজান মাসে ভুলেও নিচের কাজগুলো করতে যাবেন না।
- ঝগড়া বিবাদ থেকে দূরে থাকুন।
- মিথ্যা বলা বন্ধ করুন।
- নফসকে হেফাজতে রাখুন।
- বেশি কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। ভাবুন যে আপনি রোজা আছেন।
রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো সব খুলে দেওয়া হয় আর জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়।
আরো পড়ুন,
আকাশ বলতে সত্যিই কি কিছু আছে! জানুন সত্যকে
এ মাসের এত কদর কেন?
পবিত্র রমজান মাসের কদর মহান আল্লাহ এতগুনে বাড়িয়ে দিয়েছেন মূলত এই মাসেই পবিত্র কুরআন নাযিল করা হয়েছে।
সূরা আল বাকারার ১৮৪ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,
আলহামদুলিল্লাহ্- شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ : البقرة এই রমজান মাস, যে মাসে পবিত্র আল-কুরআন নাযিল করা হয়েছে এবং যা মানুষের জন্য স্পষ্ট নিদর্শন আর সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।
পবিত্র রমজান মাসে রয়েছে শবে কদরের রাত। যে রাত সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন,
লাইলাতুল কদর সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সেই রাতে ফেরেস্তাগন তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে প্রত্যেকে কাজে লিপ্ত হয়।
শুধু শান্তিই আর শান্তি।
পরিশেষে,
হতভাগা সেই ব্যক্তি যে পবিত্র রমজান জীবনে পেল অথচ নিজের গুনাহ হতে মহান রবের নিকট থেকে ক্ষমা নিতে পারল না। তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ হতে পারে না।
মহান রব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে আসন্ন রমজান মাসের রোজা সঠিকভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুন।
আমরা যেন বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করে সময় কাটাতে পারি সেই তৌফিক দেন, বেশি বেশি দান সদকা করার মানসিকতা তৈরী করে দেন।
রমজানের পূর্ণ হক যেন আমরা আদায় করতে পারি তার পূর্ণ তৌফিক দান করেন।
সুতরাং জান্নাতি মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করি। আমিন। এই শুভ কামণায় আজকে এ পর্যন্তই বিদায় নিচ্ছি।
আল্লাহ্ হাফেজ।