এই মহাবিশ্বে অগণিত বিষয় রয়েছে যা আমাদের টনক নাড়াতে পারে! তেমনি বিশ্বের অদ্ভুৎ এবং বিরল কিছু বিষয় নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করবো। আশা করছি সাথেই থাকবেন।
চলার পথে বিভিন্ন সময় নানা ধরণের আবিস্কার চোখে পড়ার মত।
বিষয়গুলো জেনে হয়তো রীতিমত অনেকেই অবাক হয়েছেন। একটাই প্রশ্ন তৈরী হয়েছে, এগুলো কি আদৌ সম্ভব?
অথচ আমাদের মহাবিশ্বে এগুলো বিদ্যমান রয়েছে। শুনেই যদি অবাক হয়ে থাকেন তাহলে যখন দেখবেন কি অবস্থা হতে পারে ভাবুন তো!
হোয়াইট পিকক (White Peacocks)
White Peacocks কি? নাম শুনেই হয়তো বুঝতে পারছেন। ময়ুর তাও আবার সাদা। আমরা সাধারণত নীল এবং সবুজ রঙের ময়ুরের সাথে পরিচিত। এগুলো ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং বার্মায় পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ আকাশ বলতে সত্যিই কি কিছু আছে? আকাশ সম্পর্কে অজানা কিছু!
এই সাদা ময়ুর কি আদৌ আছে আমাদের মহাবিশ্বে? পা থেকে শুরু করে মাথাসহ পালক সব কিছুই সাদা এই ময়ুরের।
এই কারণেই একে White Peacocks বলা হচ্ছে। মজার বিষয় হল এই পিককের ছানাগুলো জন্ম নেবার সময় হলুদ হয়ে জন্মায়।
পরবর্তীতে যখন পরিণত হয় তখন এরা সম্পূর্ণ সাদা হয়ে যায়। হোয়াইট পিকক কোথায় পাওয়া যায়? নিশ্চয় মনের মধ্যে এই প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে?
এ ধরণের সাদা ময়ুরগুলোকে ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার তৃণমূলে দেখতে পাওয়া যায়। জেনেটিক মিউটেশন লিউসিসম এর ফলে এগুলো সাদা রঙের হয়ে থাকে।
প্রথম পর্যায়ে আমিও অবাক হয়েছি, এমন একটি প্রাণী কি আদৌ আছে যার সম্পূর্ণ শরীর সাদা?
সত্যিই মহান আল্লাহ্ পাক এত সুন্দর নিয়ামত দিয়ে পৃথিবীকে সাজিয়েছেন যা বিশ্বের জ্ঞানী লোকদের রীতিমত অবাক করার মত।
রংধনু ইউক্যালিপ্টাস (Rainbow Eucalyptus)
ভাই জীবনে তো বহুত ইউক্যালিপ্টাস এর নাম শুনেছি। কিন্তু রংধনু ইউক্যালিপ্টাস এটা আবার কি?
হ্যাঁ সত্যিই আপনি যখন দেখবেন তখন ভাববেন যে, কেউ যেন এতে রং দিয়ে নকশা এঁকে দিছে।
অথচ, এগুলো মহামহিম আল্লাহর অনবদ্য সৃজন। চোখ যেন জুড়িযে যায়। রংধনুর বিচিত্র সাত রঙ যেন মনের মাঝে আনন্দ ফুটে তুলে।
বিস্ময়কর ঘটনা
ঠিক তেমনি এই ইউক্যালিপ্টাস আমাদের সেই রংধনুর কথা মনে করিয়ে দেয়। উত্তর গোলার্ধ, ফিলিপাইন, নিউগিনি এবং ইন্দোনেশিয়া রাজ্যে এসব গাছ দেখা যায়।
এক অনন্য দৃশ্য দেখার মত। যেন সুন্দর এক কারুকাজ করে রেখেছেন মহান স্রষ্টা। সত্যিকার অর্থে এগুলো হচ্ছে মহান রবের অনন্য সৃজন।
গাছগুলো অনেক লম্বা হয়ে থাকে। প্রায় ২৫০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। বাকলের মধ্য দিয়েই ফুটে ওঠে এর অনন্য দৃশ্য।
লাল, নীল, সবুজ আর কমলা রঙ যেন খেলা করছে এখানে।
প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং হিম প্রবাহ মুক্ত এলাকা এসব গাছের অনুকুল।
কি অপরুপ সৌন্দর্য পৃথিবীর! অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রই, কবির সেই মনমুগ্ধকর উক্তি যেন বার বার মনে পড়ে যায়।
স্টোনহেঞ্জ (Stonehenge )
ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারের স্টোনহেঞ্জ এ অবস্থিত পাথরের বলয় যা সত্যিই অবাক করার মত সৃজন। এটি একটি প্রাগৈইতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ যা প্রায় ৫০০০ হাজার বছর আগে তৈরী করা হয়েছিল।
এই স্তম্ভটির ওজন প্রায় ২৫ টন। এখানে থাকা প্রতিটি পাথর প্রায় ১৩ ফুট উঁচু আর ৭ ফুটের মত চওড়া। অনেক পন্ডিত মনে করেন যে এটি একটি সমাধিক্ষেত্র।
কিন্তু সে সময় তো এত উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। তাহলে কিভাবে এত উঁচু আর উন্নত স্তম্ভ তৈরী করা হয়েছিল তা অনেকের কাছে প্রশ্নের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেকে মনে করে থাকেন এগুলো জিনের দ্বারা তৈরী করা হয়েছে। কেননা সে সময় এত উন্নত প্রযুক্তি ছিল না তবে কুসংস্কার ছিল এটা বলা চলে।
যে কোন কিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সে সময় পাওয়া যথেষ্ট সহজ ছিল না। তাই তাদের অনেকের মনে এমন ধারণার উৎপত্তি ঘঠে।
আজ বিজ্ঞান অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এসব তথ্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে।
আর এ কারণেই আমরা অসম্ভব অনেক কিছুকে সম্ভব করতে সক্ষম হয়েছি। আজ বিজ্ঞানের অগ্রগতি চোখে পড়ার মত।
মানুষ জমিন থেকে আকাশে পাঠানো অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে একটি কম্পিউটারের মাধ্যমে।
এই কম্পিউটার বর্তমান বিজ্ঞানের অন্যতম একটি আবিষ্কার। এখন পৃথিবীর প্রতিটি দেশ কম্পিউটারকে ব্যবহার করে প্রযুক্তিকে অনেক অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আর সেই কারনেই আমরা নানাবিধ তথ্য নিমিষেই পেয়ে যাচ্ছি।
উজ্জল বন (Glowing Forest)
একটি মোহনীয় বন যা জাপানে দেখা যায়। এটি জাপানের শিকোকু-তে অবস্থিত। এই বনটিতে আপনি যদি রাতের বেলা ভ্রমণ করেন তো জোনাকীর আলোর মত উজ্জল আভা দেখতে পাবেন।
এগুলো সবুজ রঙে ভরপুর। বাহির থেকে আগন্তুক রাতের বেলা সেখানে গেলে নির্ঘাত ভয় পেয়ে যাবেন।
এখানে রয়েছে অনেক রকমের মাশরুম। বর্ষাকালে এগুলো প্রচুর পরিমাণে বনে দেখা যায় এবং রাতের বেলা কল্পনার এক রাজ্য তৈরী করে।
পৃথিবীর আশ্চর্য ঘটনা
দর্শককে প্রকৃতি যেন নিজের হাতে বিনোদন দিচ্ছে। এই ছত্রাকগুলো সেখানে থাকা পঁচা কাঠগুলোকে ভেদ করে বেরিয়ে আসে।
আরো পড়ুনঃ পৃথিবীকে চমকে দেয়ার মত কিছু আবিস্কার যার শুরুটা ছিল ভুল
জাপানে লাইট আপ ছত্রাকের প্রায় ১০ ধরণের প্রজাতি লক্ষ করা যায়।
ভাধু উপকুল (Shores Of Vaadhoo)
মালদ্বীপের ভাধু দ্বীপ। প্রকৃতির অনন্য এক দৃশ্য যেন এখানে পর্যটকের মন ভরে তোলে। মালদ্বীপে মাত্র ৫০০ জন অধিবাসী থাকে।
তাদেরকে নিয়ে প্রকৃতির দৃশ্য দেখার মত। পৃথিবীর স্বর্গ হিসেবে পরিচিত মালদ্বীপের দ্বীপপুঞ্জ। রাতের সময় উজ্জল আভায় এই উপকূল সত্যিই যেন স্বর্গীয় মনোরম ফুটে তোলে।
বায়োলুমিনেসেন্স নামক একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটার ফলে Phytoplankton প্রজাতী সেখানে নীল আভা বিচ্ছুরিত করে।
আর এই কারণেই এখানে রোমান্টিক দৃশ্য তৈরী হয়।
সূর্য গেইট (The Gate Of The Sun)
একটি মেগালিথিক কঠিন পাথরের খিলান যা বলিভিয়াতে দেখা যায়। প্রাচীন সংস্কৃতি দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে এটি। একে The Gate Of The Sun বলা হয়।
বিশ্বের দূর্লভ কিছু
এটি ৯.৮ ফুট খানেক লম্বা এবং সেই সাথে ১৩ ফুটের মত চওড়া। এর উপর বহু খোদাই করা এবং শিলালিপি লক্ষ করা যায়। এর পেছনে গভীর তাৎপর্য আছে বলে জ্যোতির্বিদরা মনে করেন।
এই কাঠামোর মাঝে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট লক্ষণীয় যা একটি দেবতার মত বলে মনে হয়। ঐতিহাসিকরা এটা বিশ্বাস করেন যে এটি সূর্য দেবতার প্রতিনিধিত্ব করে।
সত্যিই আশ্বর্য একটি বিষয় এটি। আর এসব কারণেই একে সূর্য গেইট বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
ভূগর্ভস্থ শহর (Underground City)
শহরের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এখন আমরা জানি শহর কেবলমাত্র ভূমির উপরে হয়ে থাকে। কিন্তু যদি এমন হয় যে শহর মাটির নিচে!
শুনতে কেমন লাগছে তাই নাহ?
আসলেই সত্য, তুরস্কের একটি প্রাচীন শহর রয়েছে যা একটি ভূ-গর্ভস্থ শহর। এটি প্রায় ২০০ ফুট পর্যন্ত গভীর।
কি বিশ্বাস হচ্ছে না তো?
বিশ্বের অদ্ভুৎ এবং বিরল ঘটনা
সত্যিই অবাক করার মত বিষয়। এই শহরের বিভিন্ন জায়গায় অনেক সুরঙ্গ রয়েছে। এই শহরটি একসাথে ২০,০০০ জনকে ধারণ করতে পারে।
এ থেকে আপনি আন্দাজ করতে পারবেন যে প্রাচীন কালেও মানুষের মাথায় যথেষ্ট বুদ্ধি ছিল। এটা ধারণা করা স্বাভাবিক কেননা আমাদের উৎপত্তি কিন্তু তাদের হাত ধরেই। বন্ধুরা পৃথিবীর মাঝে এমন অনেক বিস্ময় আছে যা আমাদের রীতি মত ভাবিয়ে তোলে। বিশ্বের অদ্ভুৎ এবং বিরল কোন ঘটনা আপনি জেনে থাকলে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাবেন।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরার জানা-অজানা গুণ
সময় অনেকটা পেরিয়ে গেছে। আজ এ পর্যন্তই থাক। পরবর্তীতে দেখা হবে জীবন ও প্রযুক্তির
ঐকতানে কিছু নিয়ে।
সে পর্যন্ত ভাল থাকেন।
আল্লাহ্ হাফেজ।