এটিএম বুথ, এটিএম কার্ড, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড (কার্ড নিয়ে যত কথা!)

বর্তমান বিশ্ব দিনকে দিন প্রযুক্তিতে ভর দিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে যাওয়াকে আরো তরান্বিত করতে এটিএম বুথ, এটিএম কার্ড বিশেষ ভূমিকা রাখছে। আজকে আমরা ATM বুথ ও বুথ সংশ্লিষ্ট কার্ডের বিষয়ে জানার চেষ্টা করবো।

 

তো চলুন না মূল আলোচনায় –

ATM বুথ ও এটিএম কার্ড কি?

এটিএম কার্ড সম্পর্কে আপনার কিছু তথ্য জানা উচিত। ATM – Automated Teller Machine কে আমরা সংক্ষেপে এটিএম বলে থাকি।

অটোমেটেড কথা থেকেই সম্ভবত বুঝতে পারছেন এটি ২৪ ঘন্টায় নন-স্টপ সার্ভিস প্রদানের জন্য এক ধরণের স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রনিক মেশিন।

বর্তমান ডিজিটাল এই যুগে আর্থিক লেনদেন এটি যোগ করেছে এক নতুন মাত্রা । এই মেশিনটি সর্বদা ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত।

বিভিন্ন শহরের বিভিন্ন জায়গায় একে স্থাপন করা হয়। সামান্য একটু জায়গা হলেই মেশিনটি সেট করা সম্ভব হয়।

অটোমেটিক পদ্ধতিতে কাজ করার কারণে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগের কোন প্রয়োজন হচ্ছে না স্বয়ংক্রিয় এই মেশিনটিতে।

খুবই নিরপাত্তার সাথে মানুষ ২৪ ঘন্টায় আর্থিক লেনদেন করতে পারছে নিমিষেই। এর সব থেকে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি যে কোন ব্যাংকের গ্রাহক হয়ে থাকেন না কেন এ সমস্ত বুথ থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন।

কি বুঝলেন এটিএম বুথ হচ্ছে একটি স্বয়ংক্রিয় এবং একইসাথে নিরাপদ প্রযুক্তি।

বুঝলেন তো এটিএম কি? এবার চলুন জেনে নেয়া যাক এই এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে গেলে কিসের প্রয়োজন পড়ে?

আপনি দেশের যে কোন প্রান্ত থেকেই টাকা উত্তোলন করতে পারবেন এটিএম বুথ ব্যবহার করে।

কিন্ত সেই টাকা ওঠাবেন আসলে কিসের মাধ্যমে? এর জন্য আপনার প্রয়োজন পড়বে একটি সেন্সর সমৃদ্ধ প্লাস্টিক কার্ডের।

তার মানে এটিএম কার্ডকে ভার্চুয়াল কার্ড বললেও হয়তো ভুল বলা হবে না।

এই কার্ডের নামই হচ্ছে ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ড।

কি আছে এটিএম কার্ডের মধ্যে?

ভাই! এটিএম কার্ড কি তা তো বুঝলাম। কিন্তু কার্ডের ভেতর কিছু লেখা আছে; সেগুলো আসলে কি?একটি এটিএম কার্ডের মধ্যে নিচের বিষয়গুলো অর্ন্তভূক্ত থাকে।

  • কার্ডের মালিক অর্থাৎ কার্ডধারীর নাম সংযুক্ত থাকে।
  • একটি লগো সংযুক্ত করা থাকে।
  • যাতে সহজেই সনাক্ত করা যায় তার জন্য একটি চৌম্বকীয় স্ট্রিপ।
  • CVV (কার্ড ভেরিফিকেশন ভ্যালু) নম্বর।

 

ATM কার্ডের সুবিধা (Advantages of ATM Card)

  • আপনার কাছে একটি কার্ড থাকলে আপনি যে কোন বুথ থেকে অনায়াসেই টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
  • ধরুন আপনি কোথাও বেড়াতে গেছেন। এখন কিছু কিনতে চাচ্ছেন? আপনার কাছে টাকা নাই কিন্তু এটিএম কার্ড আছে। আপনি এই কার্ড ব্যবহার করেই সেই সখ পূরণ করতে পারেন।
  • অনলাইনে কোন পণ্য সরাসরি ক্রয় করা যায় কার্ডের মাধ্যমে।
  • মোবাইল রিচার্জ, বিদ্যুৎ বিল প্রদানসহ অনলাইনের যে কোন কেনাকাটায় আপনি কার্ডকে সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন।
  • সরাসরি অর্থ নিয়ে বেড়ানোটা অনেক রিস্কি হয়ে যায়। এটিএম কার্ড মূলত আপনাকে এসব ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখে।
  • ব্যাংকে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা উত্তোলনের কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না, এক্ষেত্রে সময় অনেকটা বেঁচে যায়।
  • ব্যাংক একাউন্ট এর ছোট্ট একটি স্টেটমেন্ট সহজেই পাওয়া যায়।

 

ATM কার্ডের অসুবিধা (Disadvantages of ATM Card)

  • একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আপনাকে টাকা উত্তোলন করতে হবে।
  • এর জন্য প্রতি বছরে আপনাকে একটি বাৎসরিক চার্জ দিতে হবে।
  • কোন কারণে কার্ড এর পিন কেউ জানলে আপনি অনেক বড় সমস্যায় পড়ে যাবেন।
  • যেহেতু এটা একটা মেশিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তাই কোন যান্ত্রিক ত্রুটি হলে টাকা পেতে আপনার দেরি হয়ে যাবে নিশ্চিত।
  • কিছু সময় জাল নোট বের হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এটি সমস্যা তৈরী করে থাকে। 

 

এটিএম কার্ড এ বাৎসরিক কত চার্জ কাটে?

একটি কার্ড ব্যবহার করবো আর টাকা লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলন করবো অথচ কার্ডের চার্জ কাটবে না এটা কি সম্ভব?

আসলে এটিএম কার্ডের চার্জ কত? বছরান্তে এটি আমার কত টাকা কেটে নিতে পারে?

ঘাবড়ানোর প্রয়োজন নেই। আপনাকে এর জন্য আহামরি খুব বেশি অর্থ দিতে হবে তা কিন্তু নয়। মোটামুটি ১৫০-২০০ টাকা প্রতি বছর আপনাকে দিতে হবে।

তবে ব্যাংক ভেদে এসব কার্ডের চার্জ আলাদা হয়ে থাকে। যেমন, ডাচ-বাংলা ব্যাংক আপনার ২৩০ টাকা চার্জ কাটবে প্রতি বছর।

রূপালী ব্যাংক ২০০ টাকা হারে আর ইসলামী ব্যাংক ৩০০ টাকা বাৎসরিক চার্জ কেটে নিবে আপনার।

 

এটিএম বুথ এবং এটিএম কার্ড দুটোর ব্যবহারই কিন্তু আমাদের জানতে হবে ? ATM এর পূর্ণরূপ কি?  এর সুবিধা অসুবিধা মোটামুটি সবই তো জানলাম তাহলে  ATM কার্ড ব্যবহারের নিয়ম  না জানলে কি হয়?

 

ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড – জেনে নিন কিছু তথ্য

 

ডেবিট কার্ড

Debit কার্ড হচ্ছে আপনাকে ব্যাংক  থেকে দেয়া একটি কার্ড যা সরাসরি আপনার একাউন্টে জমানো টাকার উপর ভিত্তি করে খরচ করার সুবিধা দিবে।

এই কার্ডটিতে একটি লোগো সম্পাদনা করা থাকে। এমন লগো সম্পন্ন কার্ড যেগুলোকে আমরা প্রায়ই নিত্যদিনে ব্যবহার করে থাকি তার মধ্যে মাস্টার কার্ড ও ভিসা কার্ড উল্লেখযোগ্য।

এই ডেবিট কার্ডটিও এটিএম এর মতো ব্যাংকের সাথে যুক্ত থাকে।

 

ক্রেডিট কার্ড

অপরদিকে ক্রেডিট কার্ড আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা থাক বা না থাক দুই ক্ষেত্রেই টাকা খরচের সুবিধা দিয়ে থাকে।

তাহলে বোঝা যাচ্ছে, ডেবিট আর ক্রেডিট কার্ড এক নয়। চলুন দেখি কি পার্থক্য রয়েছে এ দুয়ের মাঝে।

ডেবিট কার্ড ক্রেডিট কার্ড
গ্রাহকের নিজস্ব একাউন্ট থেকে অর্থ খরচের সুবিধা দেয়। আর্থিক কোন প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট থেকে অর্থ খরচের সুবিধা দেয়। এটা পরে পরিশোধ করতে হয়।
সাধারণভাবে এর খরচের জন্য কোন স্টেটমেন্ট দেয়া হয় না। মাস শেষে খরচের একটি স্টেটমেন্ট হাতে দেয়া হয় যা পরিশোধ করতে হবে।
কোন পণ্য ক্রয়ের জন্য গ্রাহকের নিজস্ব একাউন্ট থেকেই খরচ করতে হয়। কোন পণ্য ক্রয়ের জন্য গ্রাহকের নিজস্ব একাউন্ট থেকেই খরচ করতে হয় না।
এই কার্ড ব্যবহারে কোন ইন্সুরেন্স সুবিধা প্রদান করা হয় না। এই কার্ড ব্যবহারে কোন ইন্সুরেন্স সুবিধা প্রদান করা হয়।
এই কার্ড ব্যবহারকারীরা উল্লেখযোগ্য কোন সুযোগ সুবিধা পায় না। এই কার্ড ব্যবহারকারীরা পণ্য কেনাকাটাসহ ডিসকাউন্ট অফার, ক্যাশব্যাক অফার এমন বিভিন্ন পয়েন্ট অর্জন করার সুবিধা পায়।
কোন কারণে কার্ডটি হারিয়ে ফেললে বড় ধরণের সমস্যা হতে পারে। অনেক বেশি নিরাপত্তা সুবিধা থাকার কারণে হারিয়ে গেলেও ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকাংশেই কম।
এই কার্ডধারীদের ব্যাংকে কোন চার্জ বা সুদ দিতে হয় না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করতে পারলে বাড়তি সুদ গুনতে হয়।
এই কার্ড দ্বারা সীমিত লেনদেন করা যায়। এর মাধ্যমে বাড়তি লেনদেন করা সম্ভব

তাহলে কোন কার্ডটি বেশি ভাল? অর্থাৎ,

ডেবিট কার্ড নাকি ক্রেডিট কার্ড কোনটি ভাল? যেহেতু ডেবিট কার্ড আপনাকে নিজস্ব অ্যাকাউন্টের বাহিরে কোন লেনদেন এর সুবিধা দিচ্ছে না, তাহলে এটা আপনার চাহিদা আর অবস্থার উপর ভিত্তি করে সুবিধাজনক নাও হতে পারে।

তবে ক্রেডিট কার্ড এই সকল সুবিধা দেয় বলে আপনি ক্রেডিট কার্ডকে পছন্দ করতে পারেন। 

 

মাস্টার কার্ড

বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত কার্ড হচ্ছে মাস্টার কার্ড। এটি দুই ধরণের হতে পারে? ডেবিট মাস্টার কার্ড আর ক্রেডিট মাস্টার কার্ড।

নিরাপদ ক্রয়, অতিরিক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা, ভ্রমন সুবধা এবং ডিসকাউন্ট সুবিধাসহ আরো অনেক সুবিধা দেয় মাস্টার কার্ড।

মাস্টার কার্ডকে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।

আপনি পছন্দ করতে পারেন,

API কি? উদাহরণসহ এপিআই এর প্রয়োজনীয়তা

তো বন্ধুরা, আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তীতে দেখা হবে তথ্য ও প্রযুক্তির নতুন কোন আলোচনায়। সে পর্যন্ত ভাল থাকেন, সুস্থ্য থাকেন শুভ কামনায় বিদায় নিচ্ছি। 

আল্লাহ্ হাফেজ।

 

 

Author

Check Also

ওয়ার্ডপ্রেস থিম রিভিউ

৫০+টি সেরা ওয়ার্ডপ্রেস থিম – ২০২৪ – থিম রিভিউ

ওয়ার্ডপ্রেস বর্তমান সময়ের সব থেকে বেশি জনপ্রিয় এবং ব্যবহৃত একটি কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম। বর্তমানে ইন্টারনেটে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *