সুপারনোভার কথা নিশ্চয় শুনেছেন? আজকে আমরা জোর্তিবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সুপারনোভা কি? তা নিয়ে আলোচনা করবো। বর্তমান বিজ্ঞানের বহুল আলোচিত একটি বিষয় হচ্ছে সুপারনোভা।
আমরা সবাই জানি যে, পৃথিবীর কোন কিছুই চিরকালের জন্য নয়। নির্দিষ্ট একটি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে সবকিছুই বিলীন হয়ে যাবে। অবশিষ্ট্য রয়ে যাবে স্মৃতির পাতায়।
জোর্তিবিজ্ঞানীরা মহাকাশে এমন কতকগুলো নক্ষত্রকে অনেক সময় দেখতে পান যেগুলো কিছু সময়ের জন্য জ্বলে ওঠে আবার পরক্ষণেই অদৃশ্য হয়ে যায়।
এ ধরণের নক্ষত্রগুলোর রং সাধারণত হলুদাভ কিংবা উজ্জল হলুদ হয়ে থাকে। আর এগুলোই সুপারনোভার সাথে সম্পর্কিত।
আমাদের দেখা সূর্য পৃথিবীর নিকটতম একটি নক্ষত্র। এমন একদিন আসবে যে সময় সেও তার আলো ছড়ানো বন্ধ করে দিবে। কেননা তার সব শক্তি ফুরিয়ে যাবে।
[সূর্যের ভরই হচ্ছে সৌরভর]
তো বন্ধুরা আর দেরী নয়, চলুন বর্তমান বিজ্ঞানের মজার এবং তথ্যবহুল একটি বিষয় সুপারনোভা নিয়ে জানা যাক।
What is Called Supernova? সুপারনোভা (Supernova) কি?
এতক্ষণে নিশ্চয় মনের মধ্যে ধারণা চলে এসেছে যে, সুপারনোভা কাকে বলে? আর সেই সাথে বর্তমান বিজ্ঞান কি বলে এই বিষয়ে?
এগুলো জানবো ইনশাআল্লাহ্।
আমরা যদি সহজে বলতে চাই তবে, সুপারনোভা (Supernova) হচ্ছে নক্ষত্রের বিস্ফোরণ। আর নক্ষত্রের এরূপ বিস্ফোরণের ফলে একটি নক্ষত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়।
আর অবশিষ্টরূপে নীহারিকা এবং ব্ল্যাকহোলের দেখা মেলে।
এখন আমরা যে নক্ষত্রের কথা বলবো তার শক্তির মূল উৎস কি জানতে চান? তা হচ্ছে হাইড্রোজেন গ্যাস। এটি নিউক্লিয়ার ফিউশন নামক বিক্রিয়ার ফলে হাইড্রোজেন গ্যাস হিলিয়াম গ্যাসে পরিণত হয়।
আর তার জন্যই নক্ষত্রের আকার বাড়তে থাকে এবং একইসাথে তার উজ্জলতাও বেড়ে যায়। আর এমন করে বাড়তে বাড়তে এক সময় নক্ষত্রের নিজস্ব গ্রাভিটির (মাধ্যাকর্ষণ শক্তি) কারণে নিজে সংকুচিত হয়।
একইসাথে তার ফুলে যাওয়া বাইরের স্তর প্রচন্ড বিস্ফোরণের দ্বারা বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর নক্ষত্রের এরূপ বিস্ফোরণের নামই হচ্ছে সুপারনোভা (Supernova)।
সুপারনোভা কি?
একটি মজার বিষয় যা জেনে আপনি অবাক হয়ে যাবেন, সূর্য তার লাইফ টাইম সার্কেলে যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে থাকে তা; Supernova সে পরিমাণ শক্তি মাত্র ১ সেকেন্ডের মধ্যে উৎপন্ন করে থাকে।
Supernova অর্থাৎ নক্ষত্রের বিস্ফোরণ ঘটার পর যে অবস্থা আমরা দেখতে পাই তাই নিউট্রন স্টার (Neutron Star) বলে পরিচিত।
তাহলে?
Supernova আসলে কি? বিগ ব্যাঙ থিওরী এবং সুপারনোভার আদৌ কোন মিল আছে কি?
সুপারনোভার পরবর্তী ধাপ কি হতে পারে?
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (Brief History)
জ্যোতির্বিদগণ একটি রাতে খেয়াল করলেন যে, ট্যুরাস নক্ষত্রপুঞ্জের এক তারকায় হঠাৎ আগুন লেগে যায় আর তার দ্বীপ্তিতে আশপাশ পুরাই আলোকিত হয়ে যায়।
সে সময় জোর্তিবিদরা এটা দেখে হতবম্ব হয়ে গেলেন। তাঁরা বুঝে উঠতে পারলেন না এটা কি হতে পারে? না বুঝতে পারায় তাঁরা এর নাম দিলেন ‘‘অথিতি তারকা’’।
ঘটনাটি ১০৫৪ সালের । ফলে জ্যোতির্বিদগণ একে অশুভ ঘটনার ইঙ্গিত হিসেবে বর্ননা করে গেলেন। এমনি করে কেটে গেল কয়েক হাজার বছর।
তারপর কানাডার এক জ্যোতির্বিদ আয়ান শিন্টন নাম ১৯৮৭ সালে ২৪ শে ফেব্রুয়ারী আকাশ পর্যবেক্ষণের সময় ঘটে যাওয়া উক্ত ঘটনাটি পুনঃরায় লক্ষ করলেন।
আর সে সময় তিনি চিলির উত্তরে পাহাড়ের চূড়ায় একটি মন্দিরের টেলিস্কোপে আকাশ পর্যবেক্ষণ করছিলেন।
আরও পড়ুন Freelancing (ফ্রিল্যান্সিং) শিখবো কিভাবে? সেরা কৌশল
তখনই সুপারনোভার বিষয়টি পুরোপুরি দৃষ্টিগোচর হয় এবং প্রকাশ পেয়ে যায়।
সুপারনোভার সাথে বিগ ব্যাঙ থিওরীর মিল (Supernova & Big Bang Theory)
Supernova এবং Big Bang Theory: আমরা ইতোমধ্যেই জেনে গেছি যে, সুপারনোভা হচ্ছে নক্ষত্রের বিস্ফোরণ অপরদিকে, বিগ ব্যাঙ থিওরী হল, যখন মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয় তখন ঘটা মহাবিস্ফোরণ। এই বিস্ফোরণের ফলে একইসাথে স্থান, সময় এবং সেই সাথে পদার্থের সৃষ্টি হয়েছে।
তাই আমরা বলতে পারি, দুটোই বিস্ফোরণ হিসেবে পরিচিত তবে, একটি তারকার বিস্ফোরণ এবং অপরটি মহাবিশ্বের সৃষ্টির সময় ঘটা বিস্ফোরণ।
সুপারনোভার সাথে ব্ল্যাকহোল এর মিল (Supernova & Black hole)
Supernova এবং Black Hole: আমরা জেনে গেছি যে, নক্ষত্রের বিস্ফোরণের ফলে নক্ষত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়। ফলে সেখান থেকে অবশিষ্টরুপে ব্ল্যাকহোলের দেখা মেলে।
আর ব্ল্যাকহোল হচ্ছে কৃষ্ণগহ্বর যা এমন এক অন্ধকার ঘন, গাঢ়, কালো স্থান যেখানে স্বয়ং আলো পর্যন্ত বিলিন হয়ে যেতে পারে। এখান থেকে কোন বস্তু বের হবার কোন ক্ষমতাই রাখে না।
তাহলে নিশ্চয় একটি প্রশ্ন মনের মাঝে তৈরী হয়ে গেছে যে, খালি চোখে দেখতে পাওয়া ইতিহাসের উজ্জ্বলতম সুপারনোভা কোনটি হতে পারে?
তবে শুনে রাখুন চাঁদ ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না? এবং সেই সাথে বলা যায় যে, শুক্র খালি চোখে দেখা ইতিহাসের উজ্জলতম ২য় সুপারনোভা।
এবার আমরা জানবো, সুপারনোভা কিভাবে কৃষ্ণহ্বরে পরিণত হয়?
Supernova যে সময় সংকুচিত হয়ে যায় সে সময় এটি অনেক ক্ষুদ্র এবং ঘন হয়। ফলে তখন এর মূলবস্তুর উপর প্রচুর পরিমাণে চাপ সংঘঠিত হয়।
এবং সেই কারণে, ইলেকট্রন ও প্রোটন মিলে নিউট্রন গঠন করে। একে আমরা নিউট্রন তারকা বলে থাকি।
এই নিউট্রণ তারকার সাথে অতি উচ্চ চৌম্বকক্ষেত্র জড়িত বলে যখন নিউট্রন তারকা সংকুচিত হয়ে যায় তখনই কৃষ্ণহ্বর কিংবা কালো গহ্বর এর দেখা মেলে।
আর এভাবেই, সুপারনোভাকে কৃষ্ণহ্বরে পরিণত হতে দেখা যায়।
তো বন্ধুরা, এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে সুপারনোভা এবং ব্ল্যাকহোল কিভাবে তৈরী হয়?
তবে অনেকেই কৃষ্ণগহ্বরকে কৃষ্ণবামন বলে থাকেন।
এবার সবশেষে একটি নতুন প্রশ্নের উদয় হওয়াটা কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। তা হচ্ছে এই যে, নক্ষত্রগুলো রয়েছে এগুলো কি দ্বারা তৈরী?
নক্ষত্রের উপাদান (The Elements of Star)
ইতোমধ্যেই আমরা জানলাম যে সুপারনোভা হল নক্ষত্রের বিস্ফোরণ। তবে এই নক্ষত্র আবার কি এবং কি উপাদান দিয়ে নক্ষত্রগুলো তৈরী তা জানবো এবার।
তবে শুনুন, অন্ধকারে নিমগ্ন থাকা জমাটবাঁধা একগুচ্ছ ঠান্ডা নীহারিকার সমন্বয়ে গঠিত হয় নক্ষত্র। ফলে আমরা বলতে পারি, নক্ষত্রের উপাদান হচ্ছে নীহারিকা।
এবার মাথাটা ঘুরাই দিলেন, আমরা এমনি থেকেই নক্ষত্র কি তাই বুঝতে কষ্ট পারছি না, তার মধ্যে আবার নীহারিকা।
ঠিক আছে,
দেখুন,
আমাদের মহাকাশের ব্যাপক অঞ্চল নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বস্তুই সাধারণত নীহারিকা হিসেবে পরিচিত। বুঝলেন তো?
আরও পড়ুনঃ পৃথিবীকে চমকে দেয়ার মত কিছু আবিস্কার যার শুরুটা ছিল ভুল
তাহলে,
Supernova অর্থাৎ নক্ষত্রের বিস্ফোরণের ফলে পৃথিবী কি হুমকির মধ্যে পড়ে যাবে?
না নক্ষত্রের বিস্ফোরণের ফলে, পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে না।
বিজ্ঞানীরা বলছেন যে সূর্যের গড় আয়ু অর্ধেকাংশ বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং এতো তাড়াতাড়ি ভয় পাবার কিছু নাই।
আশা করছি, সুপারনোভা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। আপনি যদি এ বিষয়ে নতুন কিছু জেনে থাকেন তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কেমন!
আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য কামণা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ্ হাফেজ।