পৃথিবীকে চমকে দেয়ার মত কিছু আবিস্কার যার শুরুটা ছিল ভুল

পৃথিবী যত সব আজব আর চমৎকার আবিষ্কারের কারখানা। আপনি এখানে এমন কিছু আবিষ্কার দেখে থাকবেন যা আপনার চোখকে কপাল পর্যন্ত উঠিয়ে ছাড়বে। এমনই কিছু চাঞ্চল্যকর; পৃথিবীকে চমকে দেয়ার মত কিছু আবিষ্কারের বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের টিউন।

পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এমন কিছু বিষয ঘটেছে যা সত্যিই অনেককেই ভাবিয়ে তোলার মত। আপনি এসব দেখে কিংবা শুনে হয়তো বিশ্বাসও করতে চাইবেন না। 

অথচ এগুলো সত্য। ঘটেছে এই মায়াবী পৃথিবীতে। চলুন তাহলে দেরী না করে মূল আলোচনায় আসা যাক,

১) স্যাকারিনের কথা

স্যাকারিন শব্দটির সাথে পরিচিতি নাই এমন মানুষ পাওয়া সত্যিই দুস্কর। অথচ এই স্যাকারিনের ইতিহাস আমরা অনেকেই জানি না। এমনকি আমি নিজেও জানতাম না।

আরো পড়ুনঃ মধু খেলে কি হয়? মধুর উপকারিতা

পরবর্তীতে হঠাৎ নেটের মাঝে সার্চ করতে গিয়ে দেখি কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনা। আর সেটিই আপনাদের সাথে শেয়ার করতে লিখা শুরু করে দিলাম।

পৃথিবীকে চমকে দেয়ার মত অবাক করা কিছু ঘটনা

ফ্যালবার্গ কনস্ট্যাশিন ছিলেন একজন ভুলে যাওয়া তরুন বিজ্ঞানী। তার মেধা ছিল প্রখর। তবে তার একটা ব্যামো ছিল ভুলে যাওয়া।

একদিন তিনি উইলুন নামে একটি যৌগিক পদার্থ নিয়ে গবেষণা শুরু করে দিলেন। এক ভদ্র মহিলার বাসায় পেয়িং গেস্ট থাকতেন তিনি।

একদিন গবেষণা করছেন সব ভুলে। তো সেই ভদ্র মহিলা তার কাছে খাবারের কথা বলতে গেলেন। তিনি গবেষণায় ব্যস্ত।

কিছুক্ষণ পর আবার গেলেন এবং বললেন যদি তাড়াতাড়ি না আসে তবে গবেষণার সব ভেঙে ফেলবেন। এবার ফ্যালবার্গ সেখানে গেলেন।

খাবার মুখে দিতেই তার মাথা ঘুরে গেল। এত মিস্টি। নির্ঘাত তার খাবারে চিনি মেশানো হয়েছে। এই ভেবে ভদ্র মহিলাকে কটুক্তি করে কিছু বললেন।

কিন্তু ঐ মহিলা বারবার বলতে লাগলেন যে তিনি খাবারে চিনি মেশান নাই। রেগে মেগে চলে গেলেন গবেষণাগারে।

গিয়ে ভাবতে লাগলেন আচ্ছা, যদি সেই ভদ্র মহিলা খাবারে চিনি না মেশায় তবে এত মিস্টি এল কোথা থেকে?

এইটা বলার পর আচমকা তিনি হাতের আঙ্গুল চুষতে লাগলেন। যখনই আঙ্গুল চুষতে শুরু করলেন খেয়াল করলেন, একি!!

আঙুল যত চোষে ততই মজা। ততই মিস্টি। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বুঝতে পারলেন, সালফোবেঞ্জয়িক এসিড, ফসফরাস ক্লোরাইড আর সেই সাথে অ্যামোনিয়ার এক মিশ্রণ থেকে সেই কড়া মিস্টি গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বাহ্ চমৎকার তো!

আজব ঘটনা

আবিষ্কার করে ফেললেন এক নতুন দ্রব্য। নাম তার স্যাকারিন। এভাবেই স্যাকারিনের আবিস্কার। তার ভুল কি ছিল জানেন?

তিনি হাত ভালভাবে না ধুয়েই খাবার শুরু করে দেন তাড়াহুড়োর বশে।

আর,

তার এই ভুল থেকেই আবিস্কার করে ফেললেন আজকের স্যাকারিন। নিশ্চয় মজা পেয়েছেন।

২) কোকা কোলা

কোকা কোলা পৃথিবীর জনপ্রিয় একটি পানীয়। খুব বেশি জনপ্রিয় হলেও আমরা অনেকেই কিন্তু কোকা-কোলার আবিষ্কার কীভাবে হলো সেটি জানি না।

কোকা-কোলার আবিষ্কারক  হলেন জন স্মিথ পেমবার্টন, তিনি একজন হাতুড়ে ডাক্তার। তিনি তার ঔষধ নিয়ে বাজারে বাজারে বিক্রি করে বেড়াতেন। আর অবসর পাইলে আবিস্কারের নেশায় উন্মত্ত থাকতেন।

এরই লক্ষ্যে তিনি ১৮৮৬ সালে এক ধরনের সিরাপ আবিষ্কার করেন। তাঁর মতে এই সিরাপটি মাথ্যা ব্যথার জন্য চরমভাবে কাজ করে।

পৃথিবীকে চমকে দেয়ার মত ঘটনা

এটা নিয়ে যখন তিনি একটু চিন্তা করছেন এমন সময় মাথা ব্যাথা নিয়ে এক লোক তার সামনে চলে আসলো।

দুর্ঘটনাক্রমে এই সিরাপটি কার্বোনেটেড মেশানো পানির মাথে মিশ্রিত ছিল। এই ঠান্ডা দ্রবণটি খেয়ে ঐ লোকটি অনেক মজা পেয়ে গেল।

শুরুর দিকে সেই ঠান্ডা পানীয় ৫ সেন্ট করে প্রতি গ্লাস বিক্রি করা হতো। ঐ মাথা ব্যাথা লোকটি যখন পানীয় খেয়ে খুব মজা পেলেন তখনই ঘটে গেল কান্ড।

তিনি প্রচার করতে লাগলেন। আর এদিকে ডাক্তার পানীয়টি বাজারজাত করার সিদ্ধান্ত নেন। অবশেষ বাজারে ঢল বয়ে যায় কোকা কোলার।

একটি মজার আর আশ্চর্যের বিষয় হল পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডে ৮০০০ বোতল কোকা কোলা পান করা হয়ে থাকে সেই সাথে ২০০টি দেশে এই পানীয় বাজারজাত করা হয়।

ভুল থেকে যত আবিস্কার

৩) প্রেসমেকার

বিজ্ঞান নিয়ে পড়া ছাত্রদের প্রেসমেকার খুব কমই বুঝাতে হয়। এটি এমন এক ধরণের ডিভাইস যা শরীরের অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

তবে আর্শ্চযের বিষয় হল এই প্রেসমেকার কিন্তু এক ধরণের ভুল থেকে সৃষ্টি। কেমন ছিল সেই ভুল? চলুন না জেনে নেয়ার চেষ্টা করি।

উইলসন গ্রেটব্যাচ নামের একজন বিজ্ঞানী গবেষণা শুরু করে দেন যে কিভাবে হার্টের ব্লককে সারিয়ে তাকে কর্মক্ষম করে তোলা যায়?

পশুর হৃদস্পন্দর রেকর্ড করার জন্য একটি যন্ত্র ‘অসিলেটর’ আবিস্কার করেন তিনি। আর ১৯৫৮ সালে তিনি এই যন্ত্রে একটি ট্রান্সজিস্টর সেট করেন।

সুইচ অন করার সাথে সাথেই তিনি লক্ষ করেন একটি চেনা শব্দ। যা মানুষের হৃৎপিন্ডের শব্দের সাথে হুবহু মিলে যায়।

পৃথিবীর আজব ঘটনা

পরবর্তীতে অনেক গবেষণা করে তিনি আবিস্কার করেন প্রেসমেকার। হয়ে গেল চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী আবিস্কার।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের শীর্ষ দর্শনীয় স্থান – সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান

চিকিৎসা শাস্ত্রে এক আমূল পরিবর্তন আসে যখন প্রেসমেকার আর পেনিসিলিন এর আবিস্কার হয়ে যায়।

৪) পেনিসিলিন আবিস্কার

একটা সময় ছিল যখন স্যার আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং গবেষণা করেন লন্ডনের সেন্ট মেরি হাসপাতালে। সে সময় তাঁর গবেষণাগার ছিল খুবই নোংরা।

তিনি গবেষণা করতেন ব্যাকটেরিয়া নিয়ে।ছুটি পেয়ে একবার বাসায় যান ফ্লেমিং কিন্তু অসাবধানতাবশত একটি পাত্র নোংরার মাঝে পড়ে যায় ।

কিন্তু ফ্লেমিং ছুটি থেকে ফিরে অবাক হয়ে গেলেন। ফ্লেমিং লক্ষ করলেন নোংরার মাঝে যে পাত্রটি পড়ে ছিল তা ছত্রাকে আবৃত হয়ে গেছে।

পৃথিবীকে চমকে দেয়ার মত আবিস্কার

এবার তিনি ভাবলেন তার নমুনাটি নষ্ট হয়ে গেল। ভাবতে ভাবতে তিনি ঐটা ফেলে দেবার সময় লক্ষ করলেন সেখানে থাকা ব্যাক্টেরিয়াগুলো মারা গেছে।

তিনি লক্ষ করলেন অন্য পাত্রের ব্যাকটেরিয়াগুলো সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে। এই ছত্রাকটি ছিল পেনিসিলিয়াম ক্রাইসোজেনাম প্রজাতির।

এটি এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া নিধনে বিশেষভাবে কাজ করে থাকে।

পৃথিবীর বিস্ময়

ফ্লেমিং আবিস্কার করে ফেললেন, পেনিসিলিন। বিশ্বে মৃত্যুর হার বিশ ভাগের এক ভাগ কমে গেল।

৫) সুপার গ্লু

বেশি কথা বললে কিন্তু সুপার গ্লু লাগাই দিমু। বন্ধুদের মাঝে আড্ডা দেবার সময় অনেক ক্ষেত্রেই কথাটি বলেছি। 

অথচ তখন ভালভাবে জানতামও না যে সুপারগ্লু আসলে কি? যখন জানতে পারলাম তখন বিশাল খুশি!!

কিছু যদি ভেঙে যায় তবে জোড়া দেবার জন্য প্রথমেই আমাদের মাথায় সুপার গ্লু নামটি চলে আসে। কিন্তু আমরা অনেকেই এর আবিস্কার সম্পর্কে ধারণা রাখি না।

ড. হ্যারি কুভার নামে এক গবেষক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একটি গান তৈরী করা শুরু করে দেন। এক পর্যায়ে তিনি এক ধরণের আঠা তৈরী করেন।

গান তৈরীতে ব্যস্ত থাকায় সে সময় এই আঠার বিষয়টি তার দৃষ্টি থেকে দূরে থাকে। কয়েক বছর পর তিনি প্লেনের ককপিটের উপরে দেবার জন্য জন্য তাপ বিরোধী দ্রব্য নিয়ে কাজ করছিলেন। 

হঠাৎ তিনি লক্ষ করলেন কোন তাপ এবং চাপ ব্যতিত সেই দ্রব্যটি আঠালো লাগছে। তিনি দুটি প্রিজমকে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেন।

এ সময় ঐ দ্রব্যটির সাহায্যে সেই প্রিজম দুটি চমৎকারভাবে জোড়া লেগে যায়।

পরবর্তীতে ড. হ্যারি এক ধরনের আঠা আবিস্কার করলেন যার নাম দিলেন সুপার-গ্লু। অতপর তা বাজারে চলে আসে এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

আরো পড়ুনঃ ছাত্র জীবনে ভবিষ্যৎ উজ্জলকারী দক্ষতা ( ছাত্র জীবনে দক্ষতা )

আপনার যদি এমন আর্শ্চয ঘটনা জানা থাকে তবে কমেন্ট করে জানাবেনে কেমন। ধন্যবাদ

তো বন্ধুরা আজকে এ পর্যন্তই থাক। পরবর্তীতে দেখা হবে জীবন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অন্য কোন বিষয় নিয়ে। আল্লাহ্ হাফেজ।

2 thoughts on “পৃথিবীকে চমকে দেয়ার মত কিছু আবিস্কার যার শুরুটা ছিল ভুল”

Leave a Comment