আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (artificial intelligence) তথা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা । বিভিন্ন অ্যালগরিদম ব্যবহার করে প্রোগ্রামিং এর সাহায্যে মেশিনকে বুদ্ধিমান করে তোলায় মূলত এর কাজ।
বর্তমান সময় আধুনিক বিশ্বে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। এক ধরণের স্মার্ট সফটওয়্যার টেকনোলজি যাকে ব্যবহার করে কম্পিউটার কিংবা রোবটকে মানুষের মত চিন্তা করতে, চিন্তার প্রয়োগ ঘটাতে সাহায্য করে।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি? (What is Called Artificial Intelligence?)
মানুষের চিন্তাধারা, বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে প্রযুক্তির সমন্বয়ে যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার নামই হচ্ছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
এই প্রযুক্তির সমন্বয়ের ফলে আমাদের ব্যবহার করা কম্পিউটারগুলো মানুষের মত কাজ করতে শুরু করে।
আমরা যদি একইসাথে কয়েকটি কাজ করার চেষ্টা করি তবে কি করতে পারি? অবশ্যই না। কিন্তু একটি কম্পিউটার এরকম হাজারো কাজ নিমিষেই করে দিতে পারে।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এমন একটি প্রযুক্তি অদূর ভবিষ্যতে যার প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষের সকল কার্য যন্ত্র দ্বারা সম্পাদিত হবে।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কত প্রকার?
বর্তমান সময়ের আলোচিত বিষয় আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি।
১. (Strong AI) স্ট্রং এআই
কোন মেশিন কিংবা কম্পিউটার যখন কোন মানুষের মত কাজ করবে তখন এটাকে আমরা স্ট্রং এ আই বলে থাকি।
২. (Weak AI) উইক এআই
এটা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে কাজ করে থাকে। অর্থাৎ কোন নির্ধারিত বিষয়ের উপর ভিত্তি করে যে ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম কাজ করে তাকে আমরা উইক এ আই বলে থাকি।
৩. (Singularity) সিঙ্গুলারটি
আচ্ছা মানুষের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বাড়তি কোন কিছু করতে পারে এমন কোন প্রযুক্তি আসা কি অসম্ভব? অবশ্যই না। এমন প্রযুক্তি বর্তমান সময়ে স্বাভাবিক একটি বিষয়। আর এই প্রযুক্তিই হচ্ছে সিঙ্গুলারিটি এআই।
কে আবিষ্কার করেন এই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স?
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর আবিষ্কারক হচ্ছেন অ্যালান টুরিং যিনি একাধারে একজন গণিতবিদ এবং ব্রিটিশ বিজ্ঞানী।
১৯৫০ সালের কথা। এলান টুরিং একটি যন্ত্রকে পরীক্ষা করেন যার মূল বিষয় ছিল যে যন্ত্রটি বুদ্ধিমান কি না?
এটাকে “ট্যুরিং টেস্ট” বলা হয়। কিন্তু সেই সময় খুব একটা সফলতা দেখা যায় নাই। কেননা সেই সময়ের কম্পিউটারগুলো এখনকার কম্পিউটারের মত এত বেশি শক্তিশালী ছিল না।
তাই চূড়ান্ত রেজাল্ট কাঙ্খিত আসে না। পরবর্তীতৈ শক্তিশালী কম্পিউটার আবিষ্কার এর পর আবার এর চর্চা শুরু হয়।
আর আজ অবধি এটা চলমান রয়েছে।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য
- যে কোন একটি সমস্যার প্রারম্ভিক ধারণা নেয়া।
- এবার সমস্যার কারণ খুঁজে বের করা এবং সেই অনুযায়ী সমাধানের প্রচেষ্টা করা।
- নতুন কোন জ্ঞান অর্জন করার প্রচেষ্টা তৈরী করা।
- নির্ধারিত ভাষার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা।
- মানুষের অর্জিত জ্ঞানের মত কাজ করার মত অবস্থা তৈরী করা।
- যদি কোন ভুল তথ্য দেয়া হয় তা তৎক্ষণাৎ ধরে ফেলা এবং সংশোধনের পথ তৈরী করা।
- খুব জটিল কোন সমস্যার নিঁখুত বিশ্লেষণ করা এবং নতুন কোন পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নেয়া।
Artificial Intelligence ও মেশিন লার্নিং কি একই বিষয়?
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে ধারণা তো ইতোমধ্যেই পেয়ে গেছেন এবার চলুন জেনে নেয়া যাক মেশিন লার্নিং আসলে কি?
কাজের দিক থেকে বিবেচনা করলে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, এপিআই আর মেশিন লার্নিং কে আমরা একে অন্যের পরিপূরক বলতে পারি।
মানুষের কিছু চিহ্নের মাধ্যমে আমরা তাকে চিনে থাকি। তাই নয় কি? কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কোন একটি কম্পিউটার সিস্টেমকে এমনভাবে প্রোগ্রামাইজ করে গড়ে তোলা যেন এটি আগের কোন তথ্যের উপর ভিত্তি করে নতুন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
আমরা যদি আমাদের বাস্তব জীবনের কোন বিষয়ের দিকে লক্ষ করি তবে দেখবো অনেক উদাহরণ রয়েছে মেশিন লার্নিং এর বহু উদাহরণ দেখতে পাবো।
যেমন আমরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে দেখি নানা ধরণের বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে। দেখুন নির্দিষ্ট কনটেন্ট এর উপর ভিত্তি বিজ্ঞাপন দেখায়। এটা কিন্তু মেশিন লার্নিং এর ফল যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মত দক্ষতা।
এখন আপনিই সিদ্ধান্ত নিবেন যে, মেশিন লার্নিং এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি একই বিষয়!
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিভাবে কাজ করে?
একজন মানুষ নিশ্চয়ই বুদ্ধিমান। এখন এই বুদ্ধিমান মানুষের মত একটি যন্ত্র যদি কাজ করে তাহলে তা কেমন হবে বলুন তো!
আসলে মানুষের বিকল্প হিসেবেই কিন্তু আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর উৎপত্তি। বিভিন্ন প্রয়োজনে যখন মানুষ নতুন কোন উৎস খুজছিল ঠিক তখনই প্রয়োজনের স্বার্থে এর আবিষ্কার ঘটে।
এটি মানব সভ্যতায় প্রযুক্তিকে অনেক গুন এগিয়ে নিয়েছে। তাহলে চলুন এটি কিভাবে কাজ করে আমরা দেখি।
এটাকে প্রথমত কতকগুলো উপ-শাখায় বিভক্ত করা যায়। এখানে যেভাবে প্রোগ্রাম সাজানো থাকে ঠিক সেভাবেই কাজ করে।
যেমন, আমরা যদি চাই ৫০০০ মানুষের দ্বারা করতে হবে এমন একটি কাজ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে তবে আমাদের কিন্তু এর প্রায়োগিক দিককে প্রাধান্য দিতে হবে।
এর জন্য নির্দিষ্ট করে প্রোগ্রাম সাজাতে হবে। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কোড লিখতে হবে। তবেই এটি কাজ করবে।
যদিও কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার মূল বিষয় এটি নয়। এর দ্বারা এমন কিছু বিষয় পরিচালনা করা হবে যা মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান এর পরিচয় দিবে।
বিজ্ঞানীরা এই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন? গুগলকে কিছু খুঁজে দিতে বললে গুগল কিন্তু তৎক্ষণাৎ আপনার সামনে হাজির করে দেয়। বলুন তো এটি কিভাবে করে?
এটি মূলত আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। শুরুর দিকে এটি শুধুমাত্র কিছু টেক্সট পড়া, লেখা এতটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে এটি ব্যাপকভাবে কাজ করছে।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সুবিধা ও অসুবিধা
আমরা জানি প্রত্যেকটা বিষয়ের সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও থাকে। এখন আমরা দেখবো কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা তথা Artificial Intelligence এর সুবিধা এবং অসুবিধা।
সুবিধাঃ
১। অনেক দ্রুত কাজ করার প্রয়োজন হলে এটি উত্তম একটি উপায়।
২। ভুল ত্রুটি এড়িয়ে নিঁখুত ফলাফলের জন্য ব্যবহার করা হয়।
৩। আমরা অনেক সময় ঝুঁকি নিয়ে অনেক কাজ করে থাকি। এর বড় সুবিধা হচ্ছে এখানে যন্ত্র কাজ করতেছে ঠিক মানুষের মত; তাই ঝুঁকি বলে কিছু থাকে না।
৪। দ্রুত কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারে এবং বিরতি ছাড়ায় একটানা কাজ করতে পারে।
অ-সুবিধাঃ
১। সফটওয়্যার কোন ভুল করবে না কিন্তু আমাদের ভুল ব্যবহার বিশাল ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
২। মানুষের কাজগুলো যদি মেশিন করে দেয় তবে শিক্ষিতসহ বেকারের সংখ্যা বহু অংশে বেড়ে যাবে।
৩। প্রতিনিয়ত ব্যবহারের ফলে মানুষের বুদ্ধিমত্তা অনেকাংশেই কমে যেতে পারে।
৪। এই মেশিন আমাদের দেয়া নির্দিষ্ট কোডের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। ফলে এখানে বাড়তি কোন সুবিধা পাওয়া দুস্কর।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর নিচের ব্যবহারগুলো লক্ষণীয়।
- গবেষণার কাজে বিশেষভাবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
- চিকিৎসা ক্ষেত্রে নিত্য নতুন প্রযুক্তির বিকাশে এর ব্যবহার লক্ষণীয়।
- অটোমেটিক পদ্ধতিতে কোন ডেটা সংগ্রহ করা, তথ্যকে বিশ্লেষণ করা এবং তার উপর ভিত্তি করে দ্রুত ফলাফল তৈরী করা।
- কোন জটিল সমস্যার খুব দ্রুত সমাধান করা।
- এর সাথে রোবটিক্স মিলে দ্রুত কাস্টমার সেবা প্রদান করা।
- বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান করে নতুন কিছু আবিষ্কার করা।
- বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের স্বয়ংক্রিয় রুটিন তৈরী করা।
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা কি উপকারী নাকি অপকারী?
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা তথা Artificial Intelligence উপকারি কিংবা অপকারি এ প্রশ্নটাকে আমরা অনেকভাবে ধরে নিতে পারি। যদি এর ভাল ব্যবহার করার চেষ্টা করি তবে এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারি।
কিন্তু এর ভুল কোন ব্যবহার আমাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতি বয়ে আনবে। তবে যদি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আরো উন্নত করতে পারি তবে অদূর ভবিষ্যতে এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত ভাল কিছু বয়ে আনবে।
বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন এটাকে আরো উন্নত করার। ঠিক যেন এটা মানুষের বুদ্ধির মত কাজ করতে পারে।
কিছুদিন আগেই ফেসবুক, টুইটার, গুগলসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের মালিক মিলে এই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর উন্নতির জন্য গবেষনা শুরু করে দিয়েছে।
আশা করছি অদূর ভবিষ্যতে আমরা মানুষের বিকল্প হিসেবে একটি মেশিনকে পেয়ে যাবো।
আপনি পছন্দ করতে পারেন,
তো বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই। ভাল থাকেন, সুস্থ্য থাকেন। দেখা হবে আগামীতে প্রযুক্তির নতুন কোন আলোচনায়।
আল্লাহ্ হাফেজ।