বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং হয়ে দাঁড়িয়েছে খুব জনপ্রিয় একটি আয় করার মাধ্যম। ছোট-বড় সবাই এখন এই মুক্তপেশাকে নিজের ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার হিসেবে তৈরী করছে। নানা প্রশিক্ষণ,নানা অনলাইন কোর্স এর মাধ্যমে সবাই ফ্রিল্যাংসিং শিখছে। আজকে আমরা ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য সেরা ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফম (freelancing platforms) নিয়ে আলোচনা করবো।
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কাজ করতে হলে বিভিন্ন কাজের প্রতি দক্ষতা অর্জন করতে হয় এবং তারপর সেই দক্ষতা কে কাজে লাগিয়ে এই সেক্টরে আয় করা যায়।
আরো পড়ুন, অনলাইন থেকে আয় করুন সহজ উপায়ে – ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং
তবে প্রথম দিকে আপনার আয় করতে হলে, আপনার লাগবে মার্কেটপ্লেস। এখন মার্কেটপ্লেস হচ্ছে একটি প্লাটফর্ম যেখানে আপনি বিভিন্ন কাজ খুঁজে পাবেন।
freelancing platforms
আপনার যেই কাজের প্রতি দক্ষতা রয়েছে সেই কাজই আপনি এই প্লাটফর্মে খুঁজে পাবেন। তবে প্লাটফর্ম তো অনেক রয়েছে।
কোনটা ট্রাস্টেড, কোনটা ভালো এই সম্পর্কে হয়তো নতুনদের ধারণা নাও থাকতে পারে। তাই এখন আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে যাচ্ছি সেরা ০৮টি ফ্রিল্যাংসিং মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে।
যেই মার্কেটপ্লেস গুলো খুবই ট্রাস্টেড এবং এখানে প্রচুর পরিমানে কাজ রয়েছে। তো চলুন বেশি কথা না বলে প্রথম মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে জেনে নেই।
ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট
১. Upwork
আপনি হয়তো Elance, oDesk এর কথা শুনে থাকবেন। বর্তমানে এটি আপওয়ার্ক নাম পরিচিত এবং বর্তমানে আপওয়ার্ক বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস।
এই মার্কেটপ্লেসে আপনি কাজ করার সাথে অন্যকে দিয়ে কাজ করাতেও পারবেন; ফ্রিল্যান্সার হায়ার করে।
এই মার্কেটপ্লেসে কাজ করার পর টাকা উইথড্র করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে লোকাল ব্যাঙ্ক।
২. fiver
ছোট কাজের জন্য fiverr সেরা। ছোট কাজের পাশাপাশি এইখানে আপনি বড় ধরণের কাজও পেয়ে থাকবেন।
এখানে আপনি বর্তমান সময়ে সেরা অনলাইন আর্নিং ওয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এর অজস্র কাজ পাবেন। পাশাপাশি অন্যকে দিয়ে কাজ করাতেও পারবেন।
এইখানে আপনার কাজ পেতে হলে গিগ আপলোড করতে হবে। গিগ হচ্ছে একটি পোস্ট এর মতন।
গিগটিতে আপনি যেই কাজ টি করতে পারবেন; সেই কাজটির কথা উল্লেখ করতে হবে।
তারপর আপনার গিগটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। পৌঁছানোর পরে মানুষরা আপনাকে হায়ার করবে।
আউটসোর্সিং এর জন্য জনপ্রিয় ওয়েবসাইট
যারা আপনাকে হায়ার করবে; তাদের ফাইভার এর ভাষায় বায়ার বলা হয়ে থাকে।
আর যে কাজটি করে দিবে; তাকে সেলার বলা হয়। লোকাল ব্যাঙ্ক এর সাহায্যে আপনি ফাইভার থেকে টাকা উক্তোলন করতে পারবেন।
লোকাল ব্যাঙ্ক ছাড়াও আরো কিছু উপায় রয়েছে, টাকা উঠানোর জন্য।
৩. Freelancer. com
Freelancer .com হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম একটি ফ্রিল্যাংসিং মার্কেটপ্লেস। এই মার্কেটপ্লেসটি তৈরী করা হয়েছে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে।
এইখানে আপনি বিড করে কাজ পেতে পারেন। তবে বিড করার জন্য কিছু অর্থ তাদের প্রদান করতে হয়।
প্রথমদিকে আপনার বিড করার জন্যে কোনো প্রকার অর্থ প্রদান করতে হয় না। আপনাকে প্রথমদিকে তারা ৬বার ফ্রিতে বিড করার সুযোগ দিবে।
ফ্রিতে ৬বার বিড করার পর আবার আপনার বিড করতে হলে তাদের অর্থ প্রদান করতে হবে।
তবে বিড না করতে পারলেও আপনি কনটেস্ট এ অংশগ্রহণ করে টাকা পেতে পারেন। কন্টেস্টে এমপ্লয়াররা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী একটি কাজ করে জমা দিতে বলবে।
ফ্রিল্যান্সিং ২০২২
আপনাকে কাজটি সম্পন্ন করে তাদের কাছে জমা দিতে হবে। আপনার পাশাপাশি অনেকেই কনটেস্ট জিততে কাজটি জমা দিবে।
এমপ্লয়াররা কনটেস্ট এর শেষ তারিখ উল্লেখ করে দিবে এবং আপনাকে শেষ তারিখ এর আগে কাজটি তাদের জমা দিতে হবে।
এরপর এমপ্লয়ার কন্টেস্টে সবার কাজ দেখবে। যার কাজ এমপ্লয়ার এর সবচেয়ে ভালো লাগবে তাকেই জয়ী ঘোষণা করা হবে।
আরো পড়ুন, ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং শেখার চমৎকার উপায় ২০২৪
এই মার্কেটপ্লেস থেকে টাকা উক্তোলন করার সবচেয়ে সেরা উপায় হচ্ছে লোকাল ব্যাঙ্ক।
৪.SeoClerks
SeoClerks হচ্ছে SEO এর জন্য সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস। আপনি যদি SEO ও ডিজিটাল মার্কেটিং এ বেশ পারদর্শী হন, তাহলে এই মার্কেটপ্লেস টি আপনার জন্য সেরা হবে।
অনেক বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সাররা এখানে কাজ করে থাকেন। এই মার্কেটপ্লেসটিতে আপনি আর্টিকেল রাইটিং, লিংক বিল্ডিং সহ বিভিন্ন কাজ খুঁজতে অথবা বায়ারদের অফার করতে পারবেন।
একজন ফ্রিল্যান্সার হতে চাই
SeoClerks মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ করার পর পেমেন্ট নেয়ার সেরা পদ্ধতি গুলো হচ্ছে – পায়নীর,পেপাল
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস
৫. Picoworkers
picoworkers মাইক্রোজবসের জন্য সেরা মার্কেটপ্লেস। যাদের কাজ করার জন্য উন্নতমানের কম্পিউটার নেই অথবা কাজের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে দক্ষতা নাই, তারা এই মার্কেটপ্লেসটিতে কাজ করতে পারেন।
এই মার্কেটপ্লেসটিতে কাজ করার ক্ষেত্রে আপনার একটি সাধারণ কম্পিউটার অথবা একটি সাধারণ স্মার্টফোনে থাকলেই হবে।
Picoworkers ওয়েবসাইটটিতে আপনি অনেক সাধারণ রকমের টাস্ক পূরণ করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
মিনিমাম আপনার একাউন্টটিতে ৫ ডলার থাকলে আপনি টাকা উইথড্র করতে পারবেন।
৬. People Per Hour
যুক্তরাজ্য ভিক্তিক এই মার্কেটপ্লেসটি ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়। আপনি এইখানে গ্রাফিক ডিজাইন সহ বিভিন্ন জবস পেয়ে থাকবেন।
আপনি যদি এখানে কাজ করে থাকেন তবে অন্যান্য মার্কেটপ্লেসের সামনে একে সহজের মধ্যে ব্যতিক্রম ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম (freelancing platforms) হিসেবে অনেক ভাল হিসেবে দেখে থাকবেন।
এই মার্কেটপ্লেস থেকে মেম্বারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরণের চার্জ নেয়া হয় না। People Per Hour নামক এই অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে টাকা উঠানোর উপায়গুলো হচ্ছে – লোকাল ব্যাঙ্ক, পেপাল, পায়নীর।
উইথড্র রিকোয়েস্ট দেওয়ার ৭দিনের মধ্যেই আপনি টাকা পেয়ে যাবেন।
৭.DesignHil.com
যারা লোগো ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডিজাইন, টি-শার্ট ডিজাইন এইসব গ্রাফিক ডিজাইন কাজে পারদর্শী তাদের জন্য ডিজাইন হিল নামক এই প্লাটফর্ম টি সেরা হবে।
এই মার্কেটপ্লেসটিতে আপনি গ্রাফিক ডিসাইন কাজ করে টাকা আয় করতে পারেন। টাকা আয় করার পর উইথড্র করতে হলে আপনি পায়নীর, পেপাল এর সাহায্যে টাকা উঠতে পারবেন।
৮. Guru.com
গুরু হচ্ছে ফ্রীলান্সারদের জন্য একটি বিশাল মেম্বারশিপ মার্কেটপ্লেস। গুরু.কম নামক এই মার্কেটটি (freelancing platforms) তৈরী করা হয় ২০০১ খ্রিস্টাব্দে।
বিশ্বব্যাপী এই মার্কেটপ্লেসে সাড়ে দশ লক্ষ মেম্বার রয়েছে। একজন ফ্রীলান্সার হিসেবে এই মার্কেটপ্লেসে কাজ পেতে হলে আপনাকে যথেষ্ট দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ আর্টিকেল লিখে ৬০০০০+ টাকা আয় করার ওয়েব কম্বো প্যাক
এই মার্কেটপ্লেস থেকে টাকা উইথড্র করার পদ্ধতিগুলো হচ্ছে – পায়নীর, পেপাল, ওয়্যার ট্রান্সফার।
তাহলে এত্বগুলো ওয়েবসাইটের মধ্যে আমি কোনটিতে কাজ শুরু করবো?
আপনি প্রথমত ফাইবার দিয়ে যাত্রা শুরু করতে পারেন। কেননা ফাইবার মূলত নতুনদের জন্য একটি আদর্শ মার্কেটপ্লেস।
এখান থেকে কাজ শুরু করলে প্রথম পর্যায়ে আপনার এক থেকে দুই সপ্তাহ লাগতে পারে প্রথম কাজের অর্ডার পেতে।
একবার যখন প্রথম অর্ডার সম্পন্ন করবেন তখন দেখবেন কাজের এনার্জি কয়েকগুন বেড়ে গেছে। এখানে আপনি ছোট ছোট কাজ থেকে শুরু করে বড় অনেক ধরণের কাজ পেয়ে যাবেন।
আপনি যে ধরণের কাজই জানেন না কেন এখানে সে-সকল ধরণের কাজ পেয়ে যাবেন। তবে এখানে প্রথমে আপনাকে গিগ তৈরী করতে হবে।
যা সত্যিকার অর্থে দোকানে পণ্য সাজিয়ে রাখার মত। এরপর প্রচার করবেন বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়। অতপর দেখবেন আপনার সফলতার গল্প!
তো আজকের টিউনটি এই পর্যন্তই।
পোস্টটি মনোযেগের সাথে পড়ার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করি আপনারা Nittotune এর সাথেই থাকবেন।