কেন আপনি টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহার করবেন?

প্রিয় বন্ধুরা নিশ্চয় মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজকের আলোচনায় আমরা দেখবো অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশনের ব্যবহার কেন করা হয় অর্থাৎ, আমরা আমাদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কসহ অনলাইনের বিভিন্ন জায়গাতে কেন টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহার করবো? চলুন ধারাবাহিকভাবে তা জানার চেষ্টা করি। তবে আলোচনার শুরুতে আমরা জানবে টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন বলতে আসলে কি বোঝায়? 

টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) কি? 

টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) হল একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা যা আমাদের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে লগইন করার সময় দুটি ভিন্ন প্রমাণের মাধ্যমে আমাদের পরিচয় যাচাই করে। এটি সাধারণত একটি পাসওয়ার্ডের চেয়েও বেশি নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে কেননা, আমাদের অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস করার জন্য হ্যাকারদের নিশ্চিতরূপে আমাদের পাসওয়ার্ড এবং টু ফ্যাক্টর, যেমন একটি কোড বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট উভয়ই জানা দরকার হবে। 2 Factor Authentication কি তা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন।

এবার চলুন দেখা যাক কেন আমরা আমাদের একাউন্টে টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু রাখবো?

কেন টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহার করা হয?

টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবাহর করা কেন জরুরী আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা তা জানার চেষ্টা করবো। সত্যিকার অর্থে টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) ব্যবহার করার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে-

সুরক্ষা বৃদ্ধি

            ১) 2FA আমাদের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে। আমাদের পাসওয়ার্ড জানা থাকলেও, হ্যাকাররা আমাদের অ্যাকাউন্টে অ্যাক্সেস করতে পারবে না।

আরো পড়ুনঃ কম দামে সেরা ল্যাপটপ-২০২৪

কারণ যখনই তারা একাউন্ট অ্যাক্সেস করার চেষ্টা করবে তখনই আমাদের ফানে মেসেজ চলে আসবে। আর নির্দিষ্ট কোডটি যথাস্থানে না বসানো পর্যন্ত তারা কখনই হাজার চেষ্টা করেও আমাদের একাউন্টে এক্সেস নিতে পারবে না। ফলে আমাদের একাউন্ট থাকবে শতভাগ নিরাপদ।

অর্থাৎ, টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন আমাদের একাউন্টে এক্সট্রা সেকিউরিটি লেয়ার তৈরী করবে। 

             ২) 2FA ফিশিং লিংকের বিরুদ্ধেও বাড়তি সুরক্ষা প্রদান করে থাকে, যেখানে হ্যাকাররা আমাদেরকে একটি ফাঁদ, আসলে ফাঁদ বলছি এ কারণে যে আমরা একটু অসতর্ক হলেই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ডাটা চলে যেতে পারে সেই হ্যাকারদের হাতে। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরুন, আপনি পিসি থেকে আপনার ফেসবুক একাউন্ট লগআউট করেছেন। এখন কোন একটি অফার নিতে গেলেন কোন একটি ওয়েবসাইটে। সেই ওয়েবসাইটে সুন্দর করে একটি অফারের কথা বলা হয়েছে আর অফারটি নেওয়ার জন্য নিচে একটি লিংকও দেওয়া হয়েছে। এখন আপনি লিংকটিতে ক্লিক করে বসলেন।

দেখলেন ঠিক ফেসবুকের লগইন পেজের ডিজাইনটি যেমন হুবহু একই ডিজাইনের একটি পেজ আপনার সামনে উন্মুক্ত হয়েছে।

আপনি ইউআরএল এর দিকে না তাকিয়েই সেখানে লগইন এর যাবতীয় তথ্য দিয়ে দিলেন। ব্যাস! আপনার কাম সারা! কিছুক্ষণ পর দেখছেন আর সাইটে লগইন করতেই পারছেন না। এরই মধ্যে আপনার মেইল পাসওয়ার্ড সব চেঞ্জ করা হয়ে গেছে।

একটি একাউন্ট কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ কেবলমাত্র এমন পরিস্থিতিতেই বোঝা যায়। এটা দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, টু ফ্যাক্টরও কিন্তু আপনাকে এই অবস্থা থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবে না।

তবে টু ফ্যাক্টর, অনেক ক্ষেত্রেই ফিশিং লিংকগুলোকে সনাক্ত করতে পারে এবং ফিশিং লিংকগুলোতে এক্সেস করার আগেই সতর্কবার্তা দিয়ে থাকে।

কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া একান্তই আপনার সাবধানতার উপর নির্ভর করে। আশা করছি, বিষয়টি বুঝতে পারছেন।

ডেটা সুরক্ষা

  • 2FA আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আর গোপন ডেটা, যেমন আমাদের ইমেইল, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা স্বাস্থ্য রেকর্ডকে আরও ভালভাবে সুরক্ষিত করতে সাহায্য করে। দূর্ঘটনাক্রমে আমাদের ডেটা হ্যাক হলে, হ্যাকাররা সেই তথ্যগুলো সহজে এক্সেস করতে পারে না। ফলে আমাদের ড্যাটার এক্সট্রা সেকিউরিটি নিশ্চিত হয়।

মানসিক প্রশান্তি

  • 2FA ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হই যে অন্য কেউ ইচ্ছে করলেই আমার একাউন্ট-এ লগইন করতে পারবে না এমনকি যদিও সে আমার লগইন তথ্য জেনে থাকে অতিরিক্ত সুরক্ষা আমাদের মনকে প্রশান্ত করে তোলে।

2FA ব্যবহারের কিছু জনপ্রিয় পদ্ধতি

টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন সম্পর্কে

প্রমাণীকরণ অ্যাপ

Google Authenticator, Authy, বা Microsoft Authenticator এর মতো অ্যাপগুলো ব্যবহার করে আমরা ফোনে জটিল পাসওয়ার্ড তৈরী করতে পারি।

সুরক্ষা কী

YubiKey বা Google Titan Key এগুলোর মাধ্যমেও সুরক্ষা কোড তৈরী করা যায়। 

SMS

আমরা টু ফ্যাক্টর চালু রাখার জন্য মোবাইলে মেসেজ সিস্টেম অন করতে পারি। এক্ষেত্রে প্রতিবার লগইন এর সময় আমাদের ফোনে একটি করে কোড পাঠানো হবে। অতপর সেই কোড ব্যবহার করে আমরা লগইন করতে পারি।

আমার কি টু ফ্যাক্টর চালু করা উচিত?

এটা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করবে আপনার উপর। আপনার একাউন্টে যদি অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজনীয় মনে করেন তবে এটা করা উচিত নচেৎ নয়,ব্যাস!

আরো পড়ুনঃ সিসিটিভি ক্যামেরা কেনার আগে করণীয় – সিসি ক্যামেরা নিয়ে যত কথা

আবার, 2FA আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণ করার জন্য, আপনার নিজের ব্যক্তিগত ঝুঁকি এবং প্রয়োজনীয়তাগুলোর দেকে নজর দিন। 

কোথায় টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহার করা হয়?

আমরা সাধারণত, টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) বিভিন্ন ধরণের অনলাইন অ্যাকাউন্ট এবং পরিষেবায় ব্যবহার করে থাকি।

চলুন কিছু উদাহরণ দেখে আসা যাক-

ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট

  • ইমেইল – Gmail, Yahoo Mail, Outlook
  • সোশ্যাল মিডিয়া – Facebook, Twitter, Instagram
  • ব্যাংকিং এবং আর্থিক – অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড, পেমেন্ট অ্যাপ
  • ক্লাউড স্টোরেজ – Google Drive, Dropbox, iCloud
  • ই-কমার্স – Amazon, eBay, AliExpress

প্রযুক্তিগত পরিষেবা

  • VPN – NordVPN, ExpressVPN, Private Internet Access
  • ওয়েব হোস্টিং – GoDaddy, HostGator, Bluehost
  • প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট – Asana, Trello, Basecamp
  • CRM সফ্টওয়্যার – Salesforce, HubSpot, Zoho
  • সিএসএম সফ্টওয়্যার – Zendesk, Freshdesk, HappyFox

আচ্ছা বুঝলাম কিন্তু, টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন কিভাবে কাজ করে? চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক-

টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন কিভাবে কাজ করে?

টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) হল একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা যা আমাদের পরিচয় যাচাই করার জন্য দুটি পৃথক পদ্ধতি ব্যবহার করে যখন আমরা অ্যাকাউন্টে লগইন করার চেষ্টা করি।

2FA কীভাবে কাজ করে তা চলুন একটা উদাহরণের মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক-

  • আপনি আপনার ব্যবহারকারীর নাম এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করার চেষ্টা করুন।
  • অতপর দেখুন আপনার ফোনে একটি কোড পাঠানো হয়েছে।
  • যে কোডটি পেয়েছেন সেটা নির্দিষ্ট জায়গায় প্রবেশ করান।
  • কোডটি সঠিকভাবে প্রবেশ করতে পারলে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন হয়ে যাবে। অন্যথায়, প্রবেশই করতে পারবেন না।

এটা নিশ্চিত করে যদি হ্যাকার ভুলক্রমে আমাদের পাসওয়ার্ড পেয়েও যায়, তারা আমাদের অ্যাকাউন্টে অ্যাক্সেস করতে পারবে না কারণ তাদের কাছে আমাদের ফোনও থাকতে হবে এবং সঠিক সময়ে পাঠানো কোডটিও তাদের জানতে হবে।

যেহেতু ফোনটি আমাদের হাতে আর কোডটিও আসবে আমাদের মোবাইলে সুতরাং তারা আমাদের একাউন্টে এক্সেস নিতে পারবে না। 

টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন সম্পর্কে জরুরী কিছু প্রশ্ন-উত্তর

প্রিয় পাঠক, এতক্ষন টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন সম্পর্কে তো অনেক কিছুই জানলেন। এবার চলুন টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন সম্পর্কে কিছু জরুরী প্রশ্ন-উত্তর জেনে নেওয়া যাক-

প্রশ্ন: আমার কি 2FA ব্যবহার করা উচিত?

উত্তর: হ্যাঁ, আপনার যদি গোপন কোন ডেটাসহ কোন অ্যাকাউন্ট থাকে, যেমন আপনার ইমেইল এড্রেস, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কিংবা কোন স্বাস্থ্য রেকর্ড, তাহলে 2FA ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।কেনান, এটা আপনাকে একইসাথে, আপনার অ্যাকাউন্টগুলোকে আরও বেশি নিরাপদ করতে সহায়তা করবে এবং হ্যাকারদের দ্বারা অ্যাক্সেস করা থেকে রক্ষা করবে। ‍বুঝতে পারছেন নিশ্চয়।

প্রশ্ন: আমি কিভাবে 2FA সেট আপ করব?

উত্তর: আপনি যে পরিষেবাগুলো ব্যবহার করেন তার উপর নির্ভর করে 2FA সেট আপ করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। বেশিরভাগ পরিষেবা তাদের ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে 2FA সেটিংস সরবরাহ করে। সেটিংস অপশনে গেলে বিস্তারিত তথ্য খুঁজে পাবেন বলে আশা করছি। 

প্রশ্ন: 2FA ব্যবহার করার কি কোন ঝুঁকি আছে?

উত্তর: হুম, 2FA ব্যবহার করার সাথে কিছু ছোট ঝুঁকিও থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি আপনার ২ ফ্যাক্টর, যেমন আপনার ফোন হারিয়ে ফেলেন বা আপনার পাসওয়ার্ড ভুলে যান তবে আপনার অ্যাকাউন্টে এক্সেস করতে গিয়ে ভীষণ বিপাকে পড়তে পারেন।

পরিশেষে

Two Factor Authentication সম্পর্কে দীর্ঘ এ আলোচনা থেকে নিশ্চয় এতটুকু স্পষ্ট হয়েছে আমাদের সেন্সিটিভ কোন ডাটা থাকলে একাউন্টগুলোকে সুরক্ষিত রাখার জন্য অবশ্যই টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন সিস্টেম চালু রাখা উচিত।

আরো পড়ুনঃ অল্প বাজেটের সেরা মোবাইল ফোন (৩৫০০-৯৯৯৯ টাকার মধ্যে)

আপনি যদি এ বিষয়ে নতুন কোন তথ্য জেনে থাকেন তবে আমাদেরকেও কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু, কেমন! আজ এ পর্যন্তই না হয় থাক, দেখা হবে তথ্য, প্রযুক্তি আর জীবনের নতুন কোন অধ্যায়ে, সে পর্যন্ত ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ্ হাফেজ। 

Author

Check Also

পেনড্রাইভ বুটেবল

পেনড্রাইভ বুটেবল করুন চোখের পলকেই!

একটি পেনড্রাইভ বুটেবল করা বর্তমান সময় খুবই সহজ একটি কাজ। গতানুগতিক একটি ডিভিডি ড্রাইভকে ব্যবহার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *