মধু খেলে বাড়ে বড়, চলরে চল মধু খেতে চল। স্লোগান সাথে নিয়ে মধু খেলে কি হয় কিংবা মধুর উপকারিতা কি তাই আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু।
মধু আমাদের দুধের মতই বহু উপকারী একটি তরল। শুধু কি কথায় নাকি কাজেও? চলুন জেনে নেয়া যাক।
মধু আসলে বহু গুনে গুনান্বিত একটি তরল। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এবং রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা বলে শেষ করা সম্ভব নয়। আজকে আমরা জানতে চলেছি মধুর বেশ কিছু জরুরী তথ্য।
মধুর উপাদান
৪৫টি খাদ্য উপাদান নিয়ে মধু অনন্য একটি খাবার তরল। এতে রয়েছে, গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, মন্টোজ, সুক্রোজ , খনিজ লবণ, অ্যামাইনো অ্যাসিড, এনজাইম।
তবে মধুর মধ্যে চর্বি জাতীয় কোন অংশ এবং প্রোটিন বলতে কিছু নেই। এতে যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালরি পাওয়া যায়।
মধুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিনের বিশাল সংগ্রহ। যেমন, ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬।
মধুর হাজারো গুণ। দেখুন কি উপকারিতা রয়েছে মধুর মাঝে?
শক্তি সরবরাহ
শীতকালে মধু খাওয়া বিশেষ করে বেশি উপকারী। কেননা কনকনে শীতের মাঝে মধু শরীরে তাপ ও শক্তি সরবরাহ করে। ফলে আমরা গরম অনুভব করে থাকি।
আরো পড়ুনঃ জন্ম নিবন্ধন দিয়ে খুলুন বিকাশ একাউন্ট
যদিও শীতে মধু বেশি উপকারী তবে গরমের সময়ও মধু সেবন করা যায়। এর ফলে আপনি নানান রকমের মারাত্মক ব্যধি থেকে নিজেকে সুস্থ্য রাখতে পারেন।
কোষ্ঠ্যকাঠিন্য নিরাময় এবং হজমে সহায়তা
কোষ্ঠ্যকাঠিন্য যার আছে সেই বোঝে কি যন্ত্রণাদায়ক এই অসুখ। একজন কোষ্ঠ্যকাঠিন্য রোগীকে নিয়মিত মধু খেতে বলা হয়।
কেননা এতে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর হবার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। মধুতে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূরীকরণে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
এছাড়াও মধু আমাদের হজমে অনেক সহায়তা করে।
দৃষ্টিশক্তি বর্ধক
মধু আপনার দৃষ্টি শক্তিকে প্রখর রাখতে অনেক সহায়তা করে । নিয়মিত মধু এবং গাজরের রস মিশিয়ে খেলে দৃষ্টি শক্তি বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
রূপচর্চায় মধু
সুন্দর হতে চান? চেহারার উজ্জলতা বাড়াতে চান? তবে নিয়মিত মধু পান করুন। আপনার রূপকে লাবণ্যময় করতে মধুর ভূমিকা অপরিসীম।
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে মধুর ভূমিকা
সকাল-সন্ধ্যা দুইবার দুই চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ রসুনের রস খান। প্রতিনিয়ত যদি এভাবে খেতে পারেন তবে আপনার উচ্চ রক্তচাপ অনেকাংশই কমিয়ে যাবে।
হাই-প্রেসার খুবই সাংঘাতিক একটি সমস্যা। এ ধরণের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা খুবই কম। হঠাৎ কখন যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
তবে এমন ভয় কাটিয়ে উঠতে নিয়মিত মধু সেবন করা উচিত।
রক্ত উৎপাদন এবং পরিস্কারে মধুর ভূমিকা
রক্ত উৎপাদনসহ রক্ত এবং রক্তনালী পরিস্কার করে মধু। রক্তের আয়রন উপাদানকে শক্তিশালী করে তোলে।
সুতরাং নিয়মিত মধু সেবন করুন আর রক্তকে রাখুন ফ্রেস। নিজে সুস্থ্য থাকুন, অন্যকে সুস্থ্য থাকতে সহায়তা করুন।
সুন্দর হয়ে উঠবে জীবন আর এভাবেই পৃথিবী তার সৌন্দর্য্যে ভরে উঠবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় মধু
নিয়মিত মধু খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক গুন বেড়ে যায়। শরীরের মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এবং এই ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিহত করতে মধু কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
আপনি যদি পর্যায়ক্রমে একাধিকবার রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন আর কোন ঔষুধে রোগ না সারে তখন মনে রাখবেন আপনার শরিরের ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল হয়ে গেছে।
এখন নিয়মিত মধু খাওয়ার অভ্যেস গড়ে তুলুন। দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে।
মধু হাঁপানী রোধে কার্যকরী
আপনি কি হাঁপানী বা অ্যাজমা রোগে ভুগছেন? তবে আপনার জন্য মধু একটি আদর্শ উপদান হতে পারে।
হাঁপানী/অ্যাজমা একটি মারাত্মক ব্যধি। যার হয়েছে সে বোঝে এর যন্ত্রণা কত? নিশ্বাসে বাধা মানুষের জীবনে যেটি মূল চালিকাশক্তি তার ব্যাঘাতে যে কি পরিমাণ কষ্ট তা যার নেই সে বুঝবে না।
আপনি কি হাঁপানী রোগে আক্রান্ত? জানেন তো যে হাঁপানী এমন একটি অসুখ যা হলে কখনই পুরোপুরি নির্মূল করা যায় না। এই হাঁপানীকেও মধু হার মানিয়ে দেয়।
তবে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই আঁধা গ্রাম গুড়ো মরিচ এবং আদা আর সেই সাথে মধু মিশিয়ে নিন।
প্রতিদিন তিনবার করে খাওয়ার চেষ্টা করেন। দেখবেন আপনার হাঁপানী রোগ অনেকটায় কমে গেছে।
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধুর ভূমিকা
স্বাস্থ্য রক্ষায় (মুখগহ্বরের ) মধু ব্যবহৃত হয়। দাঁতের ওপর ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়রোধ প্রতিরোধ করে।
দাঁতে মাঝে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে এবং সেই সাথে দাঁত পড়ে যাওয়া কমিয়ে আনে। দাঁতের মাঝে র্গত হলে তা পূরণ করতে মধু সহায়তা করে। ফলে সেখানে ময়লা জমতে পারে না। মূখের মাঝে বিভিন্ন অসুখের কারণে যাতে পূঁজ না জমে সেই জন্য মধু খুব উপকার করে থাকে।
গ্যাসট্রিক আলসারে মধু
আপনি যদি গ্যাসট্রিক আলসারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে নিয়মিত মধু সেবন করুন। দেখবেন আপনার গ্যাসের সমস্য ধীরে ধীরে দূরীভূত হয়ে যাবে।
সুতরাং গ্যাসট্রিক আলসারে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিয়মিত মধু সেবনের অভ্যেস গড়ে তুলুন। দেখবেন অল্প সময়ে ঐ ব্যক্তি সুস্থ্য হয়ে গেছে।
আপনি যদি এরকম গ্যাস্ট্রিক আলসারে ভুগে থাকেন তবে নিয়মিত মধু সেবনে আপনার অনেক উপকার হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
তারুণ্য অহংকার বজায় রাখতে মধু
মধুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ত্বকের উজ্জ্বল রং, টানটান ভাব ধরে রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। এর ফলে রিঙ্কেল পড়ার কোন চাঞ্জই থাকে না।
তার মানে নিয়মিত মধু সেবনে আপনার চেহারা তারুণ্যে ভরপুর থাকবে। সুতরাং প্রতিনিয়ত মধু সেবন করা উচিত 😛
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মধুর গুরুত্ব
অনেকেই ধারণা করছেন যে মধু নাকি করোনা প্রতিরোধে বিশেষ কাজে লাগছে। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি ভুল ধারণা।
আপনি যদি WHO (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা) এর দিকে নজর দেন তবে তাঁদের মতে করোন ভাইরাস প্রতিরোধে মধুর কোন কার্যকারিতায় পাওয়া যায় নাই।
তাহলে?
আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে,
মধু কি ডায়াবেটিক্স রোগী খেতে পারবে?
আমাদের মাঝে অনেকেই এমন প্রশ্ন করে থাকেন। তাদের উদ্দেশ্য বলা। যেহেতু মধুর মাঝে গ্লুকোজ এবং ফ্রুকোজ অর্থাৎ চিনি জাতীয় একটি অংশ রয়েছে।
আর আমরা জানি যে একজন ডায়াবেটিক্স রোগীর মিষ্ট জাতীয় খাবার সেবন করা উচিত নয়। তাতে দূর্ঘটনা হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুতরাং আপনি যদি জেনে বুঝে নিজের পায়ে কুড়াল মারেন তবে আপনাকে কেউ বাঁধা দিবে না। আপনি খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সকল সিমের কোড দেখুন
তার মানে নিয়মিত মধু সেবনে আপনি অনেক মারাত্মক ব্যধি থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। মধু আর কালোজিরা একসাথে খেলে অনেক দূরারোগ্য ব্যধি উপশম হয়ে থাকে।
তো বন্ধুরা অনেক দেরী হয়ে গেল। আজ এ পর্যন্তই। ভাল থাকেন, সুস্থ্য থাকেন। সকলের সুসাস্থ্য কামনা করে আজকের মত বিরতি নেয়া যাক। আল্লাহ্ হাফেজ।