এসইও (Search Engine Optimization) কি, কেন, কিভাবে?

Search Engine Optimization (সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন) এর সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে  ‍SEO (এসইও)। অন্যের ওয়েবসাইটকে টপকিয়ে নিজের ওয়েবসাইটের পজিশন সবার উপরে নিয়ে আসার এক অনন্য কৌশল হচ্ছে SEO.

তো বন্ধুরা চলুন জেনে নিই এসইও আসলে কি, কেন আর কিভাবে ওয়েবসাইটের র‌্যাংকিং এ ভূমিকা রাখে।

অনেকেই রয়েছেন যারা শুধুমাত্র সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (Search Engine Optimization) এর মাধ্যমে প্রতি মাসে লক্ষাধিক পরিমাণে আয় করছেন।

যদি আপনিও অনলাইন থেকে স্মার্ট আয়ের চিন্তা করেন তবে এটি হচ্ছে আপনার জন্য সেরা একটি ওয়ে।

কেননা, ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনন্য একটি শাখা হচ্ছে এসইও। তাহলে চলুন প্রথমে জেনে নেয়া যাক, সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন আসলে কি?

এসইও (SEO) কি?

আমরা যখন গুগল কিংবা অন্য কোন সার্চ ইঞ্জিনে গিয়ে কিছু লিখে সার্চ করার চেষ্টা করি তখন ঐ সার্চ ইঞ্জিন আমাদের সামনে কতকগুলো রেজাল্ট দেয়। সেখান থেকে আমরা আমাদের পছন্দের ওয়েবসাইট ভিজিট করি।

যখন সার্চ দেই তখন কিন্তু লিস্ট আকারে সেগুলো আমাদের সামনে দেখানো হয়। যেমন, নিচের চিত্রে লক্ষ করুন,

এসই-SEO

এখানে দেখুন আমরা এপিআই কি এই লিখে সার্চ করার পর অনেকগুলো সার্চ ফলাফল দেখাচ্ছে। এখানে নিত্যটিউন ওয়েবসাইটকে প্রথম সারিতে দেখা যাচ্ছে ।

এই যে এখানে একটা কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে যার জন্য এটি সবার উপরে চলে এসেছে; এই কৌশলকেই আমরা মূলত বলছি এসইও।

তার মানে আমরা বলতে পারি, যে কৌশল অবলম্বন করে কোন ওয়েবসাইটকে অন্যান্য ওয়েবসাইট হতে টপকিয়ে আমাদের নিজেদের কাঙ্খিত ওয়েবসাইটকে সবার উপরে নিয়ে আসা হয় তাকে এসইও বলে।

তার মানে এসইও একটি র‌্যাংকিং কৌশল।

SEO কত প্রকার?

জানলাম তো এসইও আসলে কি? তাহলে চলুন এবার জানার চেষ্টা করি এসইও কত প্রকার হতে পারে?

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওয়েব র‌্যাংকিং কৌশল এসইও কে আমরা মূলত ২টি প্রধান ভাগে ভাগ করতে পারি।

ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO)

এই ধরণের এসইও এর ক্ষেত্রে সঠিক পন্থা হিসেবে আনা হয় না। তার মানে হচ্ছে যে, সম্পূর্ন অবৈধ পথে এ ধরনের এসইও করা হয়।

আর এটি কোন সার্চ ইঞ্জিনই সমর্থন করে না।  সেই সাথে এটি অনেক রিস্কি একটি কাজ। অনলাইনে অনেকেই রয়েছেন যারা এ ধরণের কাজ করে থাকে।

ফলে তাদের ওয়েবসাইট সাময়িকভাবে গুগল কিংবা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনের টপে চলে আসে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে এই ধরণের সাইটের র‌্যাংক পেনাল্টির মাধ্যমে নষ্ট করে দেয়া হয়। ফলে হাজারো চেষ্টা করেও আর একে আগের অবস্থায় আনা সম্ভব হয় না।

অপরদিকে,

হোয়াইট হ্যাট এসইও (White Hat SEO)

অনলাইনে যে বৈধ পদ্ধতিতে ওয়েবসাইটকে র‌্যাংকিং করানো হয় তাকে সহজভাবে হোয়াইট হ্যাট এসইও বলে।

এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি কোন ধরণের রিস্ক ছাড়া করা যায়। আর সকল সার্চ ইঞ্জিন এটাকে সমর্থণ করে। আমরা White Hat Search Engine Optimization কে দুই ভাগে বিভক্ত করে থাকি।

অর্গানিক এসইও (Organic SEO)

যে এসইও করার জন্য গুগলকে কোন প্রকার অর্থ পে করতে হয় না তাকে অর্গানিক এসইও বলে। একটু কষ্ট করে কৌশল অবলম্বন করে গুগলকে বোঝালেই চলে। এসইও এর ক্ষেত্রে এটিই বেটার অপশন।

এই ধরণের এসইও করে আপনি কোন ধরণের রিস্ক ছাড়ায় কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। আর সেই সাথে পর্যাপ্ত আয় করতে পারবেন।

এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটে অর্গানিকভাবে ভিজিটর বাড়তে থাকবে। আপনি নিশ্চয় আপনার সাইট থেকে ভাল পরিমান অর্থ আয় করতে চান।

তার জন্য কিন্তু আপনাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। নিয়মিত চর্চা করতে শিখুন। আর সেই সাথে নিত্যনতুন কিছু শেখার চেষ্টা চালিয়ে যান।

থেমে থাকবেন না। নিজেকে শেখার জন্য অটুট রাখুন সব সময়। দেখবেন আপনি অল্প সময়ের মধ্যেই সফল হয়ে গেছেন।

পেইড এসইও (Paid SEO)

এই ধরণের এসইও করার জন্য আপনাকে গুগলকে অর্থ পে করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইটে কি পরিমাণ ট্রাফিক পেতে চান তার জন্য আপনাকে গুগল কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা নির্দিষ্টহারে পে করতে হবে।

On Page SEO (অন পেইজ এসইও)

অন পেইজ এসইও বলতে সাধারণত ওয়েবসাইটে পোস্টের অভ্যন্তরে যে সকল এসইওর কাজ করা হয় তাদেরকে বোঝায়।

ওয়েবসাইটকে গুগলসহ বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে টপ পজিশনে নিয়ে যাবার জন্য এটি অনন্য একটি পথ। এই পদ্ধতির এসইও অনেক বেশি কার্যকর।

তাই পোস্টের অভ্যন্তরে খুব ভালভাবে বিভিন্ন ইমেজ, প্রয়োজনীয় সকল উপাদান ঠিক রেখে পোস্ট লিখতে হয়।

এসইও এর মধ্যে এটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর একইসাথে কার্যকরীও বটে। এর জন্য পোস্টের টাইটেল, কিওয়ার্ড রিচার্স, মেটা ডেসক্রিপশন, ইমেজ অপ্টিমাইজেশন এর কাজ করতে হয়।

আপনি প্রতিনিয়ত চর্চার মধ্য দিয়ে এগুলো আয়ত্তে আনতে পারেন। 

OFF Page SEO (অফ পেইজ এসইও)

ওয়েবসাইটের বাইরে যখন এসইওর কোন কাজ করা হয় তখন এটাকে অফ পেইজ এসইও বলে।

বিভিন্ন ফোরামে, রিলেটেড ওয়েবসাইটে গিয়ে বিভিন্ন পোস্টের নিচে কমেন্ট করে নিজের ওয়েবসাইটের ঠিকানা বসিয়ে দিয়ে এই ধরণের এসইও করা হয়।

এটি অনেক লেন্থি একটি প্রসেস। লিংক বিল্ডিং অর্থাৎ ব্যাকলিংক, ফোরাম পোস্টিং, বিভিন্ন ওয়েবসাইটে গিয়ে বিভিন্ন পোস্টে কমেন্ট করাসহ নিয়মিত এর চর্চা করে যেতে হয়।

তবেই একটি ভালমানের র‌্যাংকিং ফ্যাক্টর তৈরী করা সম্ভব।

SEO কেন করা হয়?

Search Engine Optimization কেন করবো? আচ্ছা বলুনতো কেনা চায় সবার উপরে উঠতে। কেননা উপরে উঠলেই তো আয়ের মাত্রা বেড়ে যাবে।

আমরা যখন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ভিজিট করি তখন বিভিন্ন পোস্টের উপরে এবং নিচে অবস্থান কিন্তু এসইও এর মাধ্যমে করা হয়।

এখানে যে যত বেশি এসইও দক্ষতা দেখাতে পারে তার ওয়েবসাইট তত বেশি র‌্যাংকিং করে। মনে করছি আপনার একটি ভাল মানের মোবাইলের দোকান আছে।

আপনি উক্ত দোকানে হাজার রকমের প্রোডাক্ট সাজিয়ে রাখেন। এত সুন্দর করে সাজালেন যেন কাস্টমার দেখা মাত্রই নিয়ে নিবে।

এই যে পণ্যগুলো এত সুন্দর করে স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখলেন এগুলো সেল করবেন কখন? যদি আপনার পণ্যের প্রচারণার মাধ্যমে সেগুলো জনগনের কাছে না চলে যায় তবে আপনি কি কাঙ্খিত কাস্টমার আশা করেন?

আরো পড়ুন, ফোকাস কিওয়ার্ড ও মেটাডাটা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন?

এগুলো জনগনের কাছে পৌঁছালেই কিন্তু আপনি বেশি পরিমাণ কাস্টমার আশা করতে পারেন? আর এর জন্য আপনি টেলিভিশন, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে পর্যাপ্ত গ্রাহক পেয়ে যাবেন?

কিন্তু এই একই কাজ যখন ডিজিটাল উপায়ে করতে যাবেন তখন আপনার হাজার হাজার টাকা বেঁচে যাবে।

SEO শিখবো কিভাবে?

কোন কিছু শেখা মূলত নির্ভর করে কারো ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য আর অর্থের উপর। আপনি মূলত দুই উপায়ে এটি শিখতে পারেন।

১. অনলাইনকে সঙ্গী করে

এটা বলতে আসলে বোঝানো হচ্ছে যে, আপনি অনলাইন এ গুগল এর সাহায্য নিয়ে, ইউটিউবের বিভিন্ন ভিডিও দেখে আপনার এসইও এর শুভ যাত্রা শুরু করতে পারেন।অপরদিকে, আপনার যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ থাকে তবে,

২. কোন ভাল মানের প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স করে

এসইও তে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। দেখুন, দক্ষতা কিন্তু আপনা-আপনি আর এক দু-দিনের কোন ঠুনকো বিষয় নয়। নিয়মিত চর্চা করুন।

দিনের পর দিন কঠিন অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে হয়ে উঠতে পারেন একজন দক্ষ এসইও মার্কেটার। এসইও তো শিখলাম, কাজ কোথায় পাবো?

SEO এর কাজ কোথায় পাবো?

আপনি লোকাল মার্কেট এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেস দুই জায়গায় কাজ পেতে পারেন। ফেসবুকসহ যে সকল সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন নিশ্চয়?

সেখানে দেখবেন কোন না কোন বন্ধুর এসইও এর কাজ করাতে হতে পারে। তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

যদি এভাবে অর্থ নিয়ে কোন ভয় থাকে তবে মার্কেটপ্লেসে কাজের জন্য চেষ্টা করুন। 

পরিশেষে,

একটি কথা বলি, অর্থের পিছনে না দৌঁড়ে বরং পর্যাপ্ত দক্ষতা অর্জন করুন, দেখবেন অর্থই আপনার পিছু নিবে।

তো বন্ধুরা, আজ এ পর্যন্তই। দেখা হবে জীবন, তথ্য ও প্রযুক্তির নতুন কোন আলোচনায়। সে পর্যন্ত ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আল্লাহ্ হাফেজ।

Author

Check Also

পেনড্রাইভ বুটেবল

পেনড্রাইভ বুটেবল করুন চোখের পলকেই!

একটি পেনড্রাইভ বুটেবল করা বর্তমান সময় খুবই সহজ একটি কাজ। গতানুগতিক একটি ডিভিডি ড্রাইভকে ব্যবহার …

2 comments

  1. Online Training

    প্রথম এসইওর উপর কোয়ালিটিফুল লেখা পেয়েছি। পাশে আছি সবসময়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *