বর্তমান সময় মোবাইল ব্যবহার করেন না এমন কাউজে খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুঃকর। প্রযুক্তি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে মানুষের প্রযুক্তিগত চাহিদা ততই বেড়ে চলেছে। মোবাইলের ব্যবহার দিনকে দিন বেড়েই চলছে। আজকে আমরা মোবাইলের গোপন কোড সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
একজন মোবাইল ব্যবহারকারী হিসেবে আপনার এসব কোড জেনে রাখা যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করে। আপনি মোবাইলের এসব গোপন কোড সম্পর্কে জানলে শুধুমাত্র যে জানাই হবে তা নয় বরং ভবিষ্যতে বিভিন্ন সমস্যা এড়াতে বিশেষভাবে কাজে লাগবে।
আরো পড়ুনঃ গুগল ড্রাইভ কি? গুগল ড্রাইভের সঠিক ব্যবহার জেনে নিন
আমরা অনেকেই সারাদিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করে থাকি ফোনের মাঝে। অথচ আমাদের মোবাইলের গোপন কিছু কোড সম্পর্কে ধারণা নেই।
যেগুলো জানা সত্যিকার অর্থেই অনেক উপকারী। ধনী ব্যক্তির তুলনায় মোবাইল ফোন আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজনীয়।
তাহলে বন্ধুরা আর বকবক না করি। চলুন জেনে নিবেন মোবাইলের গোপন কিছু কোড সম্পর্কে…
মোবাইলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কোড
একটি এন্ড্রয়েড ডিভাইসের এসব গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় কোড আপনাকে অবশ্যই সংরক্ষন করে রাখা উচিত। কেননা কোন এক সময় এগুলোর কোন একটি আপনার বিশেষ কাজে লাগবে বলে আমর বিশ্বাস।
আউটগোয়িং কল বন্ধ করন
আপনি কি চান যে আপনার ফোন ব্যবহার করে কেউ কথা না বলুক। হয়তো বাসায় রেখে গেছেন লক ছাড়া বাড়ির কেউ সেটাকে নিজের মত করে কাজে লাগাচ্ছে।
নিজের মত করে কথা বলছে, মানে কথা বলে টাকা সব শেষ!
এন্ড্রয়েড ইউজাররা এই কাজটি করতে পারেন, ডায়ালপ্যাড থেকে *33*# ডায়াল করে। অন্যদিকে আইফোন ব্যবহারকারীকে #33# ডায়াল করে উক্ত কাজটি করতে হবে।
মোবাইলের গোপন কোড
আইএমইআই (IMEI) নাম্বার যাচাই করা
আইএমইআই হচ্ছে আর্ন্তজাতিক মোবাইল ইউনিক পরিচিত কোড। এই কোড ব্যবহার করে হারিয়ে যাওয়া ফোন ফেরত পাওয়া যায়।
আপনি হয়তো জেনে থাকবেন যে, IMEI এর পূর্ণরূপ – International Mobile Equipment Identity
আপনি ফোন থেকে *#06# ডায়াল করে একটি ফোনের আইএমইআই নাম্বার চেক করতে পারেন। আপনার স্মার্ট ফোনকে সুরক্ষিত রাখতে এই কোডটি জেনে রাখুন।
কোথাও নোট করে রাখুন। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হতে পারে। তবে এই কোডের মাধ্যমে আপনি শুধুমাত্র এন্ড্রয়েড ডিভাইস এবং কিছু সাধারণ ফোনের আইএমইআই নাম্বার যাচাই করতে পারবেন।
আইফোনের ক্ষেত্রে উক্ত কোড কোন কাজে আসবে না। মানে আইফোনে আপনি এই কোডের মাধ্যমে আইএমইআই নাম্বার যাচাই করা যায় না।
কমিউনিকেশন কার্যক্ষমতা বাড়ান
আপনি কি ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে বিরম্বনায় পড়েছেন? আপনার কমিউনিকেশন খারাপ হলে দ্রুত ডায়াল প্যাড থেকে *3370# ডায়াল করুন।
এটি ফোনের ই.এফ.আর কোডিংকে জাগ্রত করে দিবে। ফলে এর যোগাযোগ কার্যক্ষমতা বেড়ে যাবে। তবে এটি শুধুমাত্র আইফোনের ক্ষেত্রেই কাজে লাগবে।
তার মানে এর মাধ্যমে এন্ড্রয়েড ফোনের কমিউনিকেশন ক্ষমতা বাড়াতে পারবেন না।
আপনার ফোনের কমিউনিকেশন খুব খারাপ? তাহলে এই কোডটি আপনাকে সাহায্য করবে। এই কোড ফোনের ইএফআর কোডিং ব্যবস্থা সক্রিয় করে দেয়। ফোনের কমিউনিকেশন ক্ষমতা বাড়ে। আইফোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
যে সব কোড এন্ড্রয়েডের জন্য নির্ধারিত সেগুলো আইফোনে প্রয়োগ করবেন না। ঠিক একইভাবে যেগুলো আইফোনের জন্য সেগুলো এন্ড্রয়েডে ব্যবহার না করাটায় বেটার।
এতে হিতের বিপরীত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফোনকে নতুনের মত করে নিন
একটি স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে করতে অনেক সময় আমরা বিরম্বনায় পড়ে যাই। অনেক অ্যাপস ইন্সটল করার কারণে ফোন স্লো হয়ে যায়।
পরবর্তীতে সেগুলো আনইনস্টল করলেও রয়ে যায় বাড়তি কিছু উপাদান। যেগুলো পর্যায়ক্রমে আমাদের ফোনকে দুর্বল করে ফেলে।
এই সমস্যাটি এড়ানোর জন্য আমরা ফোনকে রিসেট দিতে পারি। এটি সেটিংস থেকে করতে পারেন।
অথবা ডায়াল প্যাড থেকে *#*#7780#*#* ডায়াল করলে সরাসরি আপনাকে ফ্যাক্টরি রিসেট অপশনে নিয়ে যাবে।
ওকে করে দিলেই ব্যাস। ঝামেলা মুক্ত। তবে কাজটি করার আগে আপনার ফোনের প্রয়োজনীয় সকল ফাইল সুরক্ষিত জায়গায় সেইভ করে রাখুন।
কেননা রিসেট মারার পর ফোনটি সম্পূর্ণ কেনার সময় যে অবস্থায় ছিল তেমন হয়ে যাবে। তাই সাবধান। হয়তো লাভারের কিছু ফাইল থাকতে পারে!!
আরো পড়ুনঃ অল্প বাজেটের সেরা মোবাইল ফোন (৩৫০০-৯৯৯৯ টাকার মধ্যে)
এই কোডটি শুধুমাত্র এন্ড্রয়েড ইউজারদের জন্য। আইফোনে এই সুবিধা এই কোডের মাধ্যমে পাবেন না।
ওয়াইফাই এবং ব্যটারির তথ্য যাচাই করণ
আপনি কি আপনার ফোনে ওয়াইফাই চালান, মানে ওয়াইফাই ব্যবহার করে ইন্টারনেট চালান? তাহলে স্বভাবতই ওয়াইফাই এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়।
আবার ব্যবহারকৃত ব্যাটারির ধারণ ক্ষমতাসহ যাবতীয় তথ্য জানার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে কি-বোর্ডের ডায়ালপ্যাড থেকে *#*#4636#*#* কোড ডায়াল করুন।
পেয়ে যাবেন ওয়াইফাই সিগন্যালের পাশাপাশি ব্যাটারির যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
তবে এটিও শুধুমাত্র এন্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য প্রযোজ্য। আইফোনে ব্যবহার করতে পারবেন না।
ফোন নাম্বার যাচাই
কেউ যদি তার ফোনের আইডেনটিফিকেশন বন্ধ করে না রাখে তবে আপনি একটি নির্দিষ্ট কোড #*30# ডায়াল করে উক্ত ব্যক্তির পরিচয় বের করতে পারবেন।
ঠিক একইভাবে আপনিও যদি এই আইডেনটিফিকেশন চালু করে রাখেন তবে আপনাকেও কেউ সহজেই খুঁজে পাবে।
অর্থাৎ এটি বন্ধ রাখার মাধ্যমে আপনার পরিচয় গোপন রাখতে পারবেন।
শুধুমাত্র আইফোন ব্যবহারকারীরাই এই সুবিধা পাবেন। কোন এন্ড্রয়েড ইউজার এই সুবিধা পাবেন না।
সার্ভিস সেন্টারের নাম্বার বের করা
বিভিন্ন কারণে আমাদের সার্ভিস সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করার প্রয়োজন হতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে হয় আমাদের ইন্টারনেট থেকে তথ্য বের করতে হয়।
নতুবা,
কোন পন্ডিত দাদার সরণাপন্ন হতে হয়। কি ঠিক বলি নাই?
থামেন! আপনাকে আর কষ্ট করে সেই কাজ করতে হবে না। কি-বোর্ডের ডায়াল প্যাডে চলে যান আর *#5005*7672# ডায়াল করেন।
সাথে সাথে সমস্ত সার্ভিস সেন্টারের লিস্ট পেয়ে যাবেন। এটি অ্যাপল কোম্পানির আইডিয়া যা শুধুমাত্র আইফোন ব্যবহারকারীর জন্যই প্রযোজ্য।
তার মানে আপনি এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করে এই সুবিধা পাবেন না।
কল ওয়েটিং সেবা
কি-বোর্ড থেকে *43# ডায়াল করে কল ওয়েটিং নামক ওয়েটিং সার্ভিস চালু করতে পারেন। ফলে কথা বলার মাঝে নতুন কোন ফোন কল আসলে আপনি তা রিসিভ করে কথা বলতে পারবেন।
এছাড়াও মেসেজের উত্তর দিতে পারবেন অনায়াসেই। এই সুন্দর সেবাটিও আপনি শুধুমাত্র আইফোনেই পাবেন।
তবে এন্ড্রয়েড ফোনে এই সুবিধা গ্রহণ করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ম্যানুয়ালী ফাংশন ব্যবহার করতে হবে।
এছাড়াও আরো কিছু প্রয়োজনীয় কোড জেনে রাখুন,
- *#12580*369# ডায়াল করে সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার সম্পর্কে জানুন।
- *#*#273282*255*663282*#*#* ডায়াল করে সকল মিডিয়া ফাইলের ব্যাকআপ নিতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ কম দামে সেরা ল্যাপটপ-২০২৪
- *#*#0842#*#* এর মাধ্যমে ব্যাক লাইট ও ভাইব্রেশন চেক করতে পারেন।
পরিশেষে,
আশা করছি ফোনের এসব গোপন কোড অর্থাৎ মোবাইলের কিছু গোপন তথ্য আপনি খুব সহজেই বুঝতে পেরেছেন।
উক্ত কোডগুলো কোন সেভ জায়গায় রেখে দিন। প্রয়োজন হতে পারে। জীবন ও প্রযুক্তির মিলবন্ধন খুঁজতে নিত্য টিউন এর সাথে থাকুন। ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আল্লাহ্ হাফেজ।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট, পোস্টকারীকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ