সাইবার-সিকিউরিটি-ইথিক্যাল-হ্যাকিং

Cyber Security & Ethical Hacking | সম্পর্কে জানেন কী?

  • Post author:

বর্তমান সময় অনলাইন জগতে সাইবার সিকিউরিটি এবং ইথিক্যাল হ্যাকিং (cyber security ethical hacking) বহুল আলোচিত দুটি শব্দ। প্রিয় পাঠক, আপনি কি জানেন সাইবার সিকিউরিটি ও ইথিক্যাল হ্যাকিং আসলে কি? যদি জেনে থাকেন তবে আলহামদুলিল্লাহ্। আর যদি না জেনে থাকেন তবে চলুন আমরা আজকে সাইবার সিকিউরিটি ও ইথিক্যাল হ্যাকিং সম্পর্কে  বিস্তারিত তথ্য জেনে আসি।

আপনি রেডি তো! চলুন শুরু করা যাক- আমাদের আলোচনার শুরুতে আমরা সাইবার সিকিউরিটি সর্ম্পকে জানার চেষ্টা করবো।

সাইবার সিকিউরিটি (Cyber Security)

সাইবার সিকিউরিটি হল ডিজিটাল তথ্য এবং সম্পদের সুরক্ষার জন্য প্রযুক্তি, প্রক্রিয়া এবং অনুশীলনের একটি সংমিশ্রণ।

এটি কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক, সফ্টওয়্যার এবং তথ্যকে হ্যাকিং, ম্যালওয়ার, ডেটা লঙ্ঘন এবং অন্যান্য অননুমোদিত অ্যাক্সেস, ব্যবহার, প্রকাশ, পরিবর্তন বা ধ্বংস থেকে রক্ষা করে।

সাইবার সিকিউরিটির গুরুত্ব

সাইবার সিকিউরিটি আজকের ডিজিটাল বিশ্বে অপরিহার্য। আমাদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনের বেশিরভাগই অনলাইনে সংঘটিত হয়, যার মানে আমাদের তথ্য এবং সম্পদগুলি সাইবার অপরাধীদের লক্ষ্য।

আরো পড়ুনঃ VPN কি? ভিপিএন এর কাজ কি এবং কিভাবে চালু করতে হয়?

সাইবার হামলার ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি, গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং এমনকি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।

সাইবার সিকিউরিটির উপাদান

Cyber Security তিনটি মূল উপাদান নিয়ে গঠিত-

প্রযুক্তি

সাইবার সিকিউরিটির জন্য প্রযুক্তিগত স্তর হল ডিজিটাল সম্পদের সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তি।

এটিতে অ্যান্টিভাইরাস, ফায়ারওয়াল, ইন্ট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম (IDS), এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সফ্টওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

প্রক্রিয়া

সাইবার সিকিউরিটির প্রক্রিয়াগত স্তর হল ডিজিটাল সম্পদের সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত প্রক্রিয়া।

এটিতে ব্যবহারকারী অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ, ডেটা ব্যাকআপ এবং রিকভারি পরিকল্পনা, এবং নিরাপত্তা সচেতনতা প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

মানব উপাদান

সাইবার সিকিউরিটির মানব উপাদান হল ডিজিটাল সম্পদের সুরক্ষার জন্য দায়ী ব্যক্তি। এটিতে নেটওয়ার্ক প্রশাসক, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, এবং অন্যান্য কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

Cyber Security (সাইবার সিকিউরিটি) প্রশিক্ষণ

Cyber Security একটি জটিল বিষয়, তাই এটিতে দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সাইবার সিকিউরিটি প্রশিক্ষণ বিভিন্ন স্তরে উপলব্ধ, ব্যক্তিগত কোর্স থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি পর্যন্ত।

সাইবার সিকিউরিটি প্রশিক্ষণ আপনাকে সাইবার অপরাধ সম্পর্কে জানতে এবং ডিজিটাল সম্পদগুলিকে সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিকাশ করতে সহায়তা করতে পারে।

সাইবার সিকিউরিটি (Cyber Security) ক্যারিয়ার

Cyber Security একটি ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্র, তাই দক্ষ সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের চাহিদা রয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি ক্যারিয়ারের সুযোগগুলিতে নেটওয়ার্ক প্রশাসক, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেটর এবং অন্যান্যদের অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

সাইবার সিকিউরিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যা ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনের জন্য অপরিহার্য।

সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে জানতে এবং আপনার ডিজিটাল সম্পদগুলিকে সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে সময় নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

আরো পড়ুনঃ API কি? উদাহরণসহ এপিআই এর প্রয়োজনীয়তা

Ethical Hacking হল একটি বৈধ অনুশীলন যা কম্পিউটার সিস্টেম এবং নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা দুর্বলতাগুলি সনাক্ত এবং সমাধানের জন্য ব্যবহৃত হয়।

ইথিক্যাল হ্যাকাররা, যাদের হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারও বলা হয়, তারা সিস্টেমগুলিকে অননুমোদিত অ্যাক্সেস, ব্যবহার, প্রকাশ, পরিবর্তন বা ধ্বংস থেকে রক্ষা করার জন্য কাজ করে।

তারা সাইবার অপরাধীদের দ্বারা ব্যবহার করা যেতে পারে এমন একই কৌশল এবং সরঞ্জাম ব্যবহার করে, তবে তারা কেবলমাত্র অনুমোদিত কর্তৃপক্ষের পক্ষে কাজ করে।

ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ের কিছু সাধারণ কাজগুলির মধ্যে রয়েছে-

সিস্টেম নিরাপত্তা মূল্যায়ন

ইথিক্যাল হ্যাকাররা সিস্টেমগুলিতে দুর্বলতাগুলি সনাক্ত করতে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে, যার মধ্যে রয়েছে প্যাসিভ নিরাপত্তা পরীক্ষা, সক্রিয় নিরাপত্তা পরীক্ষা এবং সামাজিক প্রকৌশল।

দুর্বলতা মেরামত

ইথিক্যাল হ্যাকাররা সিস্টেমগুলিতে সনাক্ত হওয়া দুর্বলতাগুলি মেরামত করতে কাজ করে।

নিরাপত্তা সচেতনতা প্রশিক্ষণ

ইথিক্যাল হ্যাকাররা কর্মীদের সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করতে প্রশিক্ষণ প্রদান করে।

Ethical Hacking – ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ের গুরুত্ব

ইথিক্যাল হ্যাকিং সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সাইবার অপরাধীদের দ্বারা ব্যবহার করা যেতে পারে এমন দুর্বলতাগুলি সনাক্ত করতে এবং সমাধান করতে সহায়তা করে।

এটি সাইবার হামলার ঝুঁকি হ্রাস করতে এবং সংস্থাগুলির সম্পদ রক্ষা করতে সহায়তা করে।

ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ের সুযোগ

(Ethical Hacking) ইথিক্যাল হ্যাকিং একটি ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্র, তাই দক্ষ ইথিক্যাল হ্যাকারদের চাহিদা রয়েছে।

(Ethical Hacking) ইথিক্যাল হ্যাকিং ক্যারিয়ারের সুযোগগুলিতে কম্পিউটার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, সাইবার নিরাপত্তা গবেষক, এবং নিরাপত্তা ফার্মে কর্মী অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

ইথিক্যাল হ্যাকার হয়ে উঠুন

ইথিক্যাল হ্যাকার হয়ে উঠতে, আপনাকে কম্পিউটার বিজ্ঞান, সাইবার নিরাপত্তা, এবং হ্যাকিংয়ের উপর দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন হবে।

আপনি কলেজ ডিগ্রি, অনলাইন কোর্স, বা স্ব-শিক্ষার মাধ্যমে এই দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। এবার চলুন সাইবার সিকিউরিটি ও ইথিক্যাল হ্যাকিং (cyber security ethical hacking) এর মধ্যে পার্থক্য দেখে নেওয়া যাক-

সাইবার সিকিউরিটি (Cyber Security)  ইথিক্যাল হ্যাকিং (Ethical Hacking)
সাইবার সিকিউরিটি হল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, সিস্টেম এবং ডিভাইসগুলিকে অননুমোদিত অ্যাক্সেস, ব্যবহার, প্রকাশ, পরিবর্তন বা ধ্বংস থেকে রক্ষা করার ধারণা এবং অনুশীলন। ইথিক্যাল হ্যাকিং হল সাইবার সিকিউরিটির একটি শাখা যা একজন কম্পিউটার সিস্টেম বা নেটওয়ার্কের দুর্বলতাগুলি সনাক্ত এবং প্রতিরোধ করার জন্য কৃত্রিমভাবে হ্যাকিং পদ্ধতি ব্যবহার করে।
এটি একটি ব্যাপক ক্ষেত্র যা কম্পিউটার নিরাপত্তা, নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা, অ্যাপ্লিকেশন নিরাপত্তা এবং তথ্য নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে। ইথিক্যাল হ্যাকাররা সাধারণত কোনও সংস্থার জন্য কাজ করে যারা তাদের সিস্টেমগুলিকে সুরক্ষিত রাখতে চায়। তারা সচেতনভাবে এবং আইনিভাবে হ্যাকিং করে, এবং তারা তাদের অনুসন্ধানের ফলাফলগুলি সংস্থার সাথে ভাগ করে নেয়।
সাইবার সিকিউরিটির উদ্দেশ্য হল কম্পিউটার সিস্টেম এবং নেটওয়ার্কগুলিকে রক্ষা করা ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ের উদ্দেশ্য হল দুর্বলতাগুলি সনাক্ত করা।
সাইবার সিকিউরিটি সাধারণত বৈধ ইথিক্যাল হ্যাকিং শুধুমাত্র তখনই বৈধ যখন এটি একজন সংস্থার অনুমোদন নিয়ে করা হয়।

সর্বোপরি, সাইবার সিকিউরিটি এবং ইথিক্যাল হ্যাকিং উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যা কম্পিউটার সিস্টেম এবং নেটওয়ার্কগুলিকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

আরো পড়ুনঃ ডিসটেন্স লার্নিং এবং মেশিন লার্নিং সম্পর্কে জানতে চাই

সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা সিস্টেমগুলিকে সুরক্ষিত করার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে, যখন ইথিক্যাল হ্যাকাররা দুর্বলতাগুলি সনাক্ত করার জন্য হ্যাকিং পদ্ধতি ব্যবহার করে।

এই দুটি ক্ষেত্রের পারস্পরিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে, আমরা কম্পিউটার সিস্টেম এবং নেটওয়ার্কগুলিকে আরও নিরাপদ করতে পারি।

পরিশেষে

তো বন্ধুরা এতক্ষনে নিশ্চয় সাইবার সিকিউরিটি ও ইথিক্যাল হ্যাকিং (cyber security ethical hacking) সম্পর্কে বিস্তর ধারণা পেয়েছেন।

আশা করছি এই বিষয়ে আপনার মনে আর কোন প্রশ্ন থাকার কথা নয়। যাই হউক আপনি যদি এই বিষয়ে আরো কিছু জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

ছড়িয়ে পড়ুক তথ্য ও প্রযুক্তির জ্ঞান সবার মাঝে এই প্রত্যাশায় আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ্ হাফেজ।

Author

Leave a Reply