শিক্ষা-ক্ষেত্রে-ইন্টারনেট

ইন্টারনেট কি? শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার

  • Post author:

প্রিয় বন্ধুরা, ইন্টারনেট কি? শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। আজকে আমরা ইন্টারনেট কি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে কিভাবে এই ইন্টারনেট প্রভাব ফেলছে তার খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করবো। কেন আমরা ইন্টারনেট সম্পর্কে জানবো তা জানার অদম্য ইচ্ছা থাকলে পড়া চালিয়ে যান। চলুন বেশি কথা না বলে বরং মূল আলোচনা শুরু করি।

ইন্টারনেট কি? (What is Internet?)

যদি বলি জালের জাল হচ্ছে ইন্টারনেট তাহলে কেউ কেউ বলবেন এটা কোন কথা? সত্যিকার অর্থে গোটা বিশ্বে বিস্তৃত নেটওয়ার্কের জালই হচ্ছে ইন্টারনেট। পৃথিবীর মাঝে বিদ্যমান একেকটি কম্পিউটার এর সাথে অন্যান্য কম্পিউটারগুলোর মধ্যে নেটওয়ার্কের যে সমষ্টি তাই হচ্ছে ইন্টারনেট। এখানে বিভিন্ন বিষয়ে নির্ধারিত কিছু প্রোটোকল (ইন্টারনেট প্রোটোকল) এর ভিত্তিতে ডাটা আদান-প্রদান করা হয়। 

ইন্টারনেট এর কাজ কি?

ইন্টারনেটের কাজ হল বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত আন্তঃসংযুক্ত ডিভাইসগুলোর মধ্যকার বিভিন্ন ধরনের ডাটা ও মিডিয়া আদান-প্রদান করা। ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা যেকোনো ধরনের তথ্য, যেমন- টেক্সট, ছবি, ভিডিও, অডিও, সফ্টওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশন, ইত্যাদি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যেকোনো ডিভাইসে পাঠাতে পারি। চলুন ইন্টারনেটের প্রধান কাজগুলো দেখে নিই-

যোগাযোগ

ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা সহজেই বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যেকোনো ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে পারি। ই-মেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও চ্যাট, ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা সহজেই যোগাযোগ করতে পারি।

তথ্য প্রদান

ইন্টারনেট হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্যভাণ্ডার। এখানে আমরা যেকোনো ধরনের তথ্য খুঁজে পেতে পারি। ওয়েবসাইট, ব্লগ, আর্টিকেল, ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা তথ্য পেতে পারি।

বিনোদন

ইন্টারনেট হল বিনোদনের একটি বিশাল উৎস। এখানে আমরা সিনেমা, টিভি শো, গান, গেম, ইত্যাদি উপভোগ করতে পারি।

ব্যবসা

ইন্টারনেট ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। অনলাইনে পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি বা কেনার মাধ্যমে আমরা ব্যবসা করতে পারি।

আরো পড়ুনঃ

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এর সুবিধা ও অসুবিধা (বিস্তারিত)

সুতরাং বলায় যেতে পারে ইন্টারনেট আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা যোগাযোগ করি, তথ্য খুঁজে পাই, বিনোদন উপভোগ করি এবং ব্যবসা করি।

ইন্টারনেট এর সুবিধা-অসুবিধা

ইন্টারনেট হল একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক যা আমাদের তথ্য, যোগাযোগ, বিনোদন এবং ব্যবসায়ের জন্য অত্যাবশ্যক। ইন্টারনেটের অনেক সুবিধা রয়েছে, তবে এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে।

ইন্টারনেটের সুবিধাগুলো হল-

  • ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা সহজেই পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করি, বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন সময় তথ্য আদান-প্রদান করি এবং একইসাথে বিনোদন নিতে পারি আর ব্যবসা করাও আমাদের জন্য অনেক সুবিধাজনক হয়ে উঠছে। 
  • ইন্টারনেট শিক্ষার জন্য একটি মোক্ষম মাধ্যম। আমরা অনলাইন কোর্স, টিউটোরিয়াল, এবং অন্যান্য শিক্ষামূলক সামগ্রী ব্যবহার করে আমাদের জ্ঞান উন্নত করতে পারি।
  • ইন্টারনেট স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি সহায়ক হাতিয়ার। আমরা অনলাইনে স্বাস্থ্য তথ্য খুঁজে পেতে পারি এবং স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারি।
  • ন্টারনেট আমাদের বিশ্বের অন্যান্য মানুষের সাথে সংযোগ করার একটি উপায়। আমরা অনলাইনে বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং গোষ্ঠীর সাথে যোগ দিতে পারি।

ইন্টারনেটের অসুবিধাগুলো হল-

  • ইন্টারনেটের অত্যধিক ব্যবহার আসক্তির কারণ হতে পারে। এটি সময় নষ্ট, বিভ্রান্তি এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস করতে পারে।
  • ইন্টারনেট বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে, যা সাইবার বুলিং এবং হয়রানির কারণ হতে পারে।
  • ইন্টারনেট ডেটা লঙ্ঘন, হ্যাকিং এবং নজরদারির মাধ্যমে গোপনীয়তার সাথে আপস করতে পারে।
  • এর মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য তথা গুজব ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে যা একইসাথে বিভ্রান্তিকর এবং ক্ষতিকর হতে পারে।
  • ইন্টারনেটের অত্যধিক ব্যবহার শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন চোখের চাপ, কোমর ব্যথা এবং স্থূলতা হতে পারে। এটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং আসক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার

শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার একটি বিপ্লব। ইন্টারনেট শিক্ষাকে আরও সহজ, সাশ্রয়ী এবং অ্যাক্সেসযোগ্য করে তুলেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকে শিক্ষার সুযোগ পেতে পারে।

শিক্ষায় ইন্টারনেটের ব্যবহারের কিছু সুবিধা হল-

চলুন এবার এক নজরে শিক্ষায় ইন্টারনেটের সুবিধা সমূহ দেখে নেওয়া যাক-

শিক্ষার্থীদের জন্য তথ্য ও জ্ঞানের অ্যাক্সেস বৃদ্ধি

ইন্টারনেট হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্যভাণ্ডার। শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো বিষয়ে তথ্য এবং জ্ঞান খুঁজে পেতে পারে।

ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষা

ইন্টারনেট শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব শেখার গতি এবং পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ করতে দেয়।

সক্রিয় শিক্ষা

ইন্টারনেট শিক্ষার্থীদের আরও সক্রিয় এবং অংশগ্রহণমূলক শিখতে উৎসাহিত করে।

বিশ্বব্যাপী সংযোগ

ইন্টারনেট শিক্ষার্থীদের বিশ্বের অন্যান্য শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সাথে সংযোগ করতে দেয়।

ভার্চুয়াল লার্নিং

শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়াল লার্নিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস করতে পারে। সুতরাং ভার্চুয়াল লানিং এ নতুন দিকের উন্মোচন করেছে ইন্টারনেট। 

বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার ক্রমবর্ধমান। বাংলাদেশ সরকার শিক্ষার জন্য ইন্টারনেটের ব্যবহারকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ, শিক্ষকদের জন্য ইন্টারনেট প্রশিক্ষণ এবং অনলাইন শিক্ষার জন্য সহায়তা প্রদান।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা আমাদের দৈন্দদিন জীবনের প্রায় সকল কাজে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সহায়তা নিচ্ছি। চলুন ইন্টারনেট সম্পর্কে আরো বাড়তি কিছু জানা যাক-

ইন্টারনেট এর পূর্ণরূপ কি?

ইন্টারকানেক্টেড নেট্ওয়ার্ক এর সংক্ষিপ্ত রূপই হচ্ছে ইন্টারনেট। বুঝতে পারছেন তো? একে সাধারণত নেট বলেই আখ্যায়িত করা হয়।

ইন্টারনেটের জনক কে?

Vinton Gray Cerf. ভিন্টন সার্ফ হচ্ছেন ইন্টারনেটের জনক। তিনি একজন আমেরিকান বিজ্ঞানী। সেই সাথে তিনি আধুনিক ইন্টারনেটের জনক হিসেবে স্বীকৃত। 

ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে?

ইন্টারনেট কাজ করে প্রোটোকলগুলির একটি সেট ব্যবহার করে যা কম্পিউটারগুলিকে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে দেয়। এই প্রোটোকলগুলির মধ্যে রয়েছে টিসিপি/আইপি (ট্রানস্মিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল/ইন্টারনেট প্রোটোকল), যা কম্পিউটারগুলিকে তথ্য আদান-প্রদান করতে দেয় এবং এইচটিটিপি (হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল), যা ওয়েবসাইটগুলিকে অ্যাক্সেস করতে দেয়।

ইন্টারনেটের ইতিহাস কী?

ইন্টারনেটের ইতিহাস ১৯৭০-দশকের মাঝামাঝি পর্যায়ে শুরু হয়েছিল। সেই সময়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ একটি নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি করছিল যা যুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তথ্য আদান-প্রদান করতে পারত। এই নেটওয়ার্কটি অ্যার্পানেট (অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি নেটওয়ার্ক) নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭০-এর দশকে, অ্যার্পানেট গবেষক এবং শিক্ষাবিদদের জন্য একটি জনপ্রিয় গবেষণা নেটওয়ার্ক হয়ে ওঠে। ১৯৯১সালের ২৩ এ আগস্ট, ইন্টারনেট জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

মন্তব্য

তো বন্ধুরা আশা করছি ইন্টারনেট সম্পর্কে আপনারা অনেক কিছু জানতে পারছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার দিনকে দিন বেড়েই চলছে। আশা করছি, অদূর ভবিষ্যতে এটি আরো বাড়বে।

সুতরাং ইন্টারনেট ব্যবহার করে উপকৃত হন এই প্রত্যাশায় আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আল্লাহ্ হাফেজ।

Author

Leave a Reply